ছবি: ছবি: সংগৃহীত
দ্রুজ ও বেদুইনদের মধ্যে চলমান সহিংসতায় নিয়ন্ত্রণহীন পরিস্থিতি, হাসপাতালে আহতদের ভিড়
সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের দ্রুজ অধ্যুষিত সুইদা শহরে এক সপ্তাহ ধরে চলা তীব্র সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় এক হাজার মানুষ। শনিবার দিনভর শহরজুড়ে মর্টার শেলের বিস্ফোরণ এবং মেশিনগানের গুলির শব্দে প্রকম্পিত হয়েছে অঞ্চলটি। যদিও সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, সরকারি বাহিনী বেদুইন যোদ্ধাদের হটিয়ে শহরের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করেছে, তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, সংঘর্ষ এখনও থামেনি।
সিরিয়ায় চলমান এই উত্তেজনার সূত্রপাত ঘটে দ্রুজ সম্প্রদায় ও সিরিয়ান বেদুইনদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব থেকে। প্রথমে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলেও পরে সরকার হস্তক্ষেপ করলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করে। সরকারি বাহিনী শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে গিয়ে দ্রুজ যোদ্ধাদের সাথেই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। এর ফলে, সংঘর্ষে নতুন মাত্রা যোগ হয়।
ব্রিটেনভিত্তিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে সুইদা ও তার আশপাশের গ্রামগুলোতে সংঘর্ষে অন্তত ৯৪০ জন নিহত হয়েছেন। এদের অধিকাংশই সাধারণ নাগরিক বলে ধারণা করা হচ্ছে। সহিংসতায় আহতদের অনেকেই আশপাশের হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সুইদার একটি হাসপাতালের চিকিৎসক ওমর ওবেইদ জানিয়েছেন, তাদের হাসপাতাল এখন আহত রোগীতে পরিপূর্ণ। তিনি বলেন, অনেক রোগীর শরীরজুড়ে বোমার স্প্লিন্টারের আঘাত রয়েছে, কেউ কেউ মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন এবং তাৎক্ষণিক অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ছে।
সরকারি বাহিনীর অভিযানে শহরের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের দাবি করা হলেও, শহরের বিভিন্ন অংশে এখনো গোলাগুলি এবং মর্টার বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। শহরজুড়ে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।
এদিকে, সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা এক টেলিভিশন ভাষণে জানিয়েছেন, দেশটিতে ইসরায়েলি হস্তক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলছে। তিনি দাবি করেন, ইসরায়েল দক্ষিণাঞ্চলে ও রাজধানী দামেস্কে সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর বিমান হামলা চালিয়েছে, যার ফলে দেশের নিরাপত্তা আরও হুমকির মুখে পড়েছে। প্রেসিডেন্ট আল-শারা অভিযোগ করেন, দ্রুজ যোদ্ধারাই বেদুইনদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়ে সংঘর্ষ বাড়িয়ে তুলেছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেওন সার বলেন, সিরিয়ায় আল-শারার শাসনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা হুমকির মুখে রয়েছে। তিনি দাবি করেন, কুর্দ, দ্রুজ, আলাউই এবং খ্রিস্টান— কোনো গোষ্ঠীই এখন নিরাপদ নয়।
যুক্তরাষ্ট্র এই পরিস্থিতিতে আল-শারার সরকারকে সমর্থন জানিয়ে বলেছে, তারা একটি কেন্দ্রীভূত ও সকল সম্প্রদায়ের জন্য নিরাপদ সিরিয়া গঠনের পক্ষে। তবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে সরকারের ব্যর্থতা এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার বিস্তার এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সহিংসতা থামাতে একাধিক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হলেও সেগুলোর কোনোটিই কার্যকর হয়নি। বরং, দিন যত যাচ্ছে সংঘর্ষ ততই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। স্থানীয় অধিবাসীরা জীবন বাঁচাতে শহর ছেড়ে পালাচ্ছেন, অনেকে আশ্রয় নিচ্ছেন পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে। মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নিরাপত্তাহীনতার কারণে।
সুইদায় চলমান সহিংসতা সিরিয়ার সাম্প্রতিক ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ এবং জটিল সংঘর্ষে পরিণত হয়েছে। এটি শুধু সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নয়, বরং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপরও প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহল উদ্বেগ প্রকাশ করলেও কার্যকর হস্তক্ষেপ কিংবা শান্তি উদ্যোগ এখনো দৃশ্যমান নয়।
repoter

