ছবি: -সংগৃহীত ছবি
সরকার মব সংস্কৃতিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে, কারণ এতে সরকারের রাজনৈতিকভাবে লাভ হচ্ছে—এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রুমিন ফারহানা বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। গত এক বছরে প্রায় ৩৭০ থেকে ৩৮০টি মব লিঞ্চিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিদিনের হিসেবে প্রায় একটি করে এমন ঘটনা ঘটছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এমন দেশে কে বিনিয়োগ করবে? এমনকি পাগলও বাস করতে চাইবে না।
তিনি দাবি করেন, এই ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে দেশে শিক্ষিত সমাজের হতাশা চরমে পৌঁছেছে। গত চার দশকে বাংলাদেশে এক বিশাল ‘ব্রেইন ড্রেন’ ঘটেছে। অনেক মেধাবী তরুণ-তরুণী স্থায়ীভাবে বিদেশে চলে গেছে। যারা দেশে রয়ে গেছেন তারাও সুযোগ পেলেই দেশ ছাড়তে চাইছেন। বন্ধুবান্ধব ও পরিচিত মহলের সঙ্গে কথা বললেই এটি স্পষ্ট হয়ে যায়।
রুমিন ফারহানা বলেন, মব লিঞ্চিং ঠেকানো তো দূরের কথা, বরং বর্তমান সরকারই এ ধরনের ঘটনার পেছনে মদদ দিচ্ছে। তার মতে, সরকারের তৃণমূলের কোনো শক্ত সংগঠন নেই, নেই অঙ্গসংগঠন। ফলে প্রয়োজনীয় সময়ে জনগণের ওপর চাপ সৃষ্টি করার ভান করতে সরকার মব ব্যবহার করছে। শাহবাগ কিংবা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসে সরকারের পক্ষ থেকে যেসব চাপ সৃষ্টি হয়, তার অনেকটাই মবকে দিয়ে করানো হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই যে এক বছরে ৩৭০টি মব ঘটলো, তার কারণ একটাই—সরকার ভেতর থেকে চায় মবটা থাকুক। এতে সরকারের অনেক লাভ। কারণ সরকারের নিজের কোনো কর্মীবাহিনী নেই, তাই মবকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করছে।”
দেশে অপরাধ প্রবণতা প্রসঙ্গে তিনি আরও উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক এক সাংবাদিকতার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, গড়ে প্রতি কয়েক ঘণ্টায় একজন মানুষ খুন হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় দেশে মানুষের জন্য ন্যূনতম স্বস্তিও নেই। বর্তমান সরকার জনগণকে নিরাপত্তা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে তিনি বলেন, সমস্যার সমাধান একদিনে সম্ভব নয়। নির্বাচনের মাধ্যমেই একটি জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। নির্বাচিত সরকার গঠন হলে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত একটি সুশৃঙ্খল চেইন অব কমান্ড তৈরি হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও জানবে তাদের জবাবদিহিতা কার কাছে।
রুমিনের মতে, একটি নির্বাচিত সরকার যদি স্পষ্ট অবস্থান নেয় যে অপরাধীদের আর্থিক, সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনা না করে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তবে দেশের পরিস্থিতি পাল্টে দিতে বেশি সময় লাগবে না। অপরাধী যে দলেই থাকুক, নির্বাচিত সরকার যদি প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়, তবে অপরাধ দমন সম্ভব হবে বলে তিনি বিশ্বাস প্রকাশ করেন।
রুমিন ফারহানা আরও বলেন, নির্বাচন হলে জনগণের কাছে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়। তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং মব সংস্কৃতিও রোধ করা সম্ভব হবে। তার মতে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াই দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারে।
repoter

