ঢাকা,  শুক্রবার
১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ , ০২:০৭ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ: ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল * গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, দেশে–বিদেশে উদ্বেগ * ঢাকা–দিল্লি সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা, আজ চালু থাকছে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র * ৬৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ জব্দ, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে গতি আনছে সরকার * যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ ফিরিয়ে আনছেন ট্রাম্প, সমালোচনার কেন্দ্রে ভেনেজুয়েলা অভিযান * পাবনার বেড়ায় স্পিডবোটে এসে বাজারে ডাকাতি, ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত * যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভেনেজুয়েলা অভিযান: মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে * ট্রাম্পের ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা: ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে নতুন জটিলতা * গুম ও মানবতাবিরোধী অভিযোগে ১৩ সেনা কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে * বিএনপির ৪০টির বেশি আসনে মনোনয়নসংক্রান্ত অসন্তোষ, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ব্যস্ত সমাধান খুঁজতে

সেনাবাহিনী নিয়োগ নিয়ে বিতর্কে ফাটল, ইসরায়েলে পতনের পথে নেতানিয়াহুর সরকার

repoter

প্রকাশিত: ০৯:৫২:৫৪অপরাহ্ন , ১৫ জুলাই ২০২৫

আপডেট: ০৯:৫২:৫৪অপরাহ্ন , ১৫ জুলাই ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: ছবি: সংগৃহীত

ধর্মীয় জোট সদস্য ইউটিজে পদত্যাগ, সংখ্যাগরিষ্ঠতা সংকটে, গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে চাপের মুখে নেতানিয়াহু

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের ভেতরে সেনাবাহিনী নিয়োগ সংক্রান্ত বিতর্কে নতুন করে ফাটল ধরেছে। ধর্মীয় রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড টোরাহ জুডাইজম (ইউটিজে) সরকার থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সরকার সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পথে পৌঁছেছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) ইউটিজে দলের ছয় সংসদ সদস্য পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন, যা ৪৮ ঘণ্টা পর কার্যকর হবে। তাদের অভিযোগ, সরকার আল্ট্রা-অর্থডক্স ধর্মীয় শিক্ষার্থীদের সেনাবাহিনীতে অংশগ্রহণ থেকে বাদ রাখার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই কারণে তারা জোটে থাকার যৌক্তিকতা হারিয়েছেন।

ইউটিজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আরেক ধর্মীয় দল ‘শাস’-এরও জোট ছাড়ার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। যদি শাস দলও জোট ত্যাগ করে, তাহলে নেতানিয়াহুর সরকার সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা সম্পূর্ণরূপে হারাতে পারে।

তবে সংসদ চলতি মাসের শেষ দিকে গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে যাওয়ায় আপাতত সরকার পতনের আশঙ্কা নেই। তবুও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই পরিস্থিতিকে নেতানিয়াহুর জন্য বড় এক সতর্ক সংকেত হিসেবে দেখছেন।

সরকারের এই সংকটের পেছনে গাজা যুদ্ধবিরতির আলোচনা এবং রাজনীতির চাপও রয়েছে। কাতারের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চলছে। এতে হামাসের কাছে থাকা কিছু বন্দি মুক্তির সম্ভাবনা এবং গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।

তবে যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা করছে নেতানিয়াহুর জোটের কট্টর ডানপন্থী অংশ। জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গাভির এবং অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোৎরিচ যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে রয়েছেন। অন্যদিকে, মন্ত্রিসভায় যুদ্ধবিরতির জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থন রয়েছে বলে জানিয়েছেন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী টোপাজ লুক। তিনি জানিয়েছেন, সংসদে সঠিক প্রস্তাব আনা হলে প্রধানমন্ত্রী সেটি পাস করাতে সক্ষম হবেন।

সামরিক কর্মকাণ্ডের কারণে দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্রমেই ক্ষোভ বাড়ছে। গাজার বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে ইসরায়েল প্রায় ৪৫০ সৈন্যের প্রাণ হারিয়েছে, যা সাম্প্রতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন। অন্যদিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় ৫৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজা উপত্যকা প্রায় পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে মানবিক সংকটে পড়েছে, যেখানে খাদ্য, পানি ও ওষুধের তীব্র অভাব বিরাজ করছে।

এসবের মধ্যে সেনাবাহিনীতে নিয়োগের বিষয়টি রাজনৈতিক অস্থিরতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। আল্ট্রা-অর্থডক্স ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা দীর্ঘদিন ধরে সেনাবাহিনী থেকে মওকুফ ছিল। কিন্তু নতুন নিয়োগ বিলের মাধ্যমে তাদের অন্তর্ভুক্তির পরিকল্পনা আনুমানিক রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইউটিজে এবং অন্যান্য ধর্মীয় দল এই পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করেছে। এই বিতর্কই বর্তমানে নেতানিয়াহুর সরকারের ভিত দুর্বল করার মূল কারণ। যেসব রাজনৈতিক দিক থেকে বর্তমান জোট সরকারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, সেই সংকটের কেন্দ্রে সেনাবাহিনীতে ধর্মীয় শিক্ষার্থীদের নিয়োগের বিষয়টিই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি এই রাজনৈতিক সংকট অব্যাহত থাকে এবং জোটে থাকা ধর্মীয় দলগুলো সরকার থেকে সরে যায়, তাহলে নেতানিয়াহুর পদত্যাগ এবং নতুন নির্বাচনের দিকে দেশ এগিয়ে যাবে। এছাড়া গাজা যুদ্ধবিরতি ও সামরিক অভিযান নিয়েও দেশের অভ্যন্তরীণ চাপ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সরকারের অবস্থান আরো দুর্বল করছে।

বর্তমান পরিস্থিতি ইসরায়েলের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক পরীক্ষার মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যেখানে সেনাবাহিনী নিয়োগ সংক্রান্ত বিতর্ক ও ধর্মীয় রাজনৈতিক দলের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে।

repoter