
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
ভাসানচর থেকে পালানোর সময় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী ইউনিয়নের একটি পরিত্যক্ত জাহাজ কারখানার ভেতর থেকে ৪৫ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছে স্থানীয় জনগণ। পরে তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সোমবার দুপুরে এই ঘটনা ঘটে। আটক রোহিঙ্গারা নারী ও শিশুসহ একটি ট্রলারে করে ভাসানচর থেকে পালিয়ে এসেছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভাটিয়ারী ইউনিয়নের অক্সিজেন রোড এলাকার একটি পরিত্যক্ত জাহাজ কারখানায় কয়েকজন রোহিঙ্গাকে দেখতে পায় স্থানীয়রা। এরপর সন্দেহ হলে তাদের আটক রেখে সাবেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনকে খবর দেওয়া হয়। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের খাবার ও আশ্রয় দেওয়ার ব্যবস্থা করেন এবং পরবর্তীতে থানায় যোগাযোগ করে পুলিশে হস্তান্তরের উদ্যোগ নেন।
ঘটনার বিষয়ে সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুজিবুর রহমান জানান, আটক ৪৫ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশের একটি দল তাদের একটি বড় বাসে করে নিয়ে যাবে এবং যথাযথ প্রক্রিয়ায় হস্তান্তর সম্পন্ন করবে।
আটক রোহিঙ্গাদের ভাষ্যমতে, তারা ভাসানচর থেকে মোট তিনটি ট্রলারে করে পালানোর চেষ্টা করেন। প্রত্যেক ট্রলারে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ শতাধিক রোহিঙ্গা ছিল। তাদের মূল গন্তব্য ছিল কক্সবাজারের টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্প। তবে মাঝপথে একটি ট্রলারের যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দিলে সেটি সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারীর সাগর উপকূলে এসে থামে। পরবর্তীতে ট্রলারের মাঝি ও অন্যান্য সহযোগীরা জোর করে তাদের উপকূলে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়।
আটক রোহিঙ্গারা অভিযোগ করেন, ভাসানচরে তাদের জন্য যে খাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম এবং সেখানে জীবনযাপন দুরূহ হয়ে উঠেছে। তারা জানান, মূল ভূখণ্ডের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফিরতে পারলে তাদের জীবনযাত্রা কিছুটা হলেও সহজ হবে বলে তারা মনে করেন। এক রোহিঙ্গা বলেন, “আমাদের যদি আবার ভাসানচর পাঠানো হয়, তাহলে আমরা আবারও পালিয়ে আসব। প্রয়োজনে মেরে ফেলেন, তবুও আমরা ভাসানচরে ফিরব না।”
এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও সামনে চলে এসেছে ভাসানচরের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি ও তাদের মানবিক সংকট। স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নজরদারি বাড়িয়েছে এবং অন্যান্য ট্রলারের সন্ধানে কাজ করছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ ধরনের অনুপ্রবেশে এলাকার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে।
সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, “স্থানীয়রা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রথমে তাদের আটক রাখে। পরে আমরা খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করি এবং পুলিশের কাছে তাদের হস্তান্তর করি। পুলিশের উপস্থিতিতে তারা শান্তভাবে গাড়িতে ওঠে।”
রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে থেকে যাচ্ছে। ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে একটি বড় অংশ সেখানে থাকার ক্ষেত্রে অনিচ্ছা প্রকাশ করে আসছে। এ ধরনের পালানোর ঘটনা প্রশাসনকে যেমন চাপের মুখে ফেলছে, তেমনি মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যেও উদ্বেগ তৈরি করছে।
এদিকে প্রশাসন জানিয়েছে, যেসব রোহিঙ্গা এখনো ফেরত পাঠানো হয়নি বা যারা নিখোঁজ রয়েছে, তাদের শনাক্ত ও সন্ধানের জন্য উপকূলীয় এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। একইসাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্থানীয়দের সহযোগিতায় অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভাসানচরে অবস্থান নিয়ে অসন্তোষ এখনও দূর হয়নি। তাদের নিরাপত্তা, খাদ্য সরবরাহ এবং মৌলিক চাহিদার বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করা সময়ের দাবি হয়ে উঠছে। সরকারের পক্ষ থেকে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হলেও বাস্তবে তা কতটা কার্যকর হচ্ছে—তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আরও একবার প্রমাণিত হলো।
repoter