ছবি: -সংগৃহীত ছবি
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) নতুন রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। ২৪ দফা অগ্রাধিকারভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা সম্বলিত এই রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী রোজার আগেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রোডম্যাপ প্রকাশ করেন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। তিনি জানান, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ইসি সুসংহত পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে এবং সেই অনুযায়ী ধাপে ধাপে কার্যক্রম এগিয়ে যাবে।
রোডম্যাপ অনুযায়ী, আগামী সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করবে নির্বাচন কমিশন। শুধু রাজনৈতিক দলই নয়, সংলাপে অংশ নেবেন বিভিন্ন অংশীজন, গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা, নারী নেতৃত্ব এবং নাগরিক সমাজের ব্যক্তিরাও। নির্বাচনকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য এসব সংলাপকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে কমিশন। আখতার আহমেদ বলেন, "আমরা নির্বাচনের রোডম্যাপ ২৪টি ভাগে সাজিয়েছি। প্রতিটি ধাপের সঙ্গে অন্য ধাপের যোগসূত্র রয়েছে। সংলাপই এর একটি বড় অংশ।"
ঘোষিত কর্মপরিকল্পনায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে। তার আগে তফসিল ঘোষণা হবে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। অর্থাৎ ভোটের দিন নির্ধারণ করা হবে নির্বাচনের দুই মাস বা ৬০ দিন আগে।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনী রোডম্যাপের মূল লক্ষ্য হলো প্রক্রিয়াটিকে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করা। এজন্যই শুরু থেকেই বিভিন্ন অংশীজনকে যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত গ্রহণ, গণমাধ্যমকে সম্পৃক্ত করা এবং নারী নেতৃত্বসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। কমিশনের কর্মকর্তারা মনে করছেন, এ ধরনের পরামর্শ ও সংলাপ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আখতার আহমেদ আরও বলেন, "আমরা চাই প্রতিটি কাজ পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যাক। এজন্য রোডম্যাপকে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যাতে করে কোনো কাজই আলাদা হয়ে না পড়ে, বরং একটির সঙ্গে আরেকটি সুসমন্বিতভাবে সম্পন্ন হয়।"
প্রসঙ্গত, এর আগে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আধুনিকায়ন ও প্রযুক্তিনির্ভর করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। নতুন রোডম্যাপে সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ, প্রযুক্তি ব্যবহারের সম্প্রসারণ, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়, এবং ভোটকেন্দ্রগুলোকে নিরাপদ করার বিষয়ও কর্মপরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত।
রাজনৈতিক দলগুলো বরাবরই নির্বাচনকালীন সরকারের রূপ ও দায়িত্ব নিয়ে নানা মতামত দিয়ে আসছে। তবে নির্বাচন কমিশন মনে করছে, নির্ধারিত সময়ে এবং সঠিক প্রক্রিয়ায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য রোডম্যাপই হবে সবচেয়ে কার্যকর কাঠামো।
এদিকে রোডম্যাপ ঘোষণার পর রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন দল বলছে, কমিশন যদি আন্তরিকভাবে রোডম্যাপ অনুসারে কাজ করে এবং সংলাপের মাধ্যমে সবার মতামত অন্তর্ভুক্ত করে, তবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে। অন্যদিকে কেউ কেউ মনে করছেন, কমিশনের ঘোষণার চেয়ে বাস্তবায়নই বড় চ্যালেঞ্জ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য শুধু পরিকল্পনা নয়, সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য দৃঢ় মনোভাব ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি। তারা মনে করছেন, নির্বাচনী সংলাপ একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হলেও, সংলাপের ফলাফল কতটা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হয়, সেটাই শেষ পর্যন্ত নির্ধারণ করবে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা।
ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা অবশ্য আশাবাদী। তারা বলছেন, কমিশন ধাপে ধাপে রোডম্যাপের প্রতিটি কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করবে। সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করাই হবে তাদের প্রধান লক্ষ্য।
সবমিলিয়ে বলা যায়, ঘোষিত রোডম্যাপ শুধু একটি পরিকল্পনা নয়, বরং নির্বাচন কমিশনের প্রতিশ্রুতি। আগামী ডিসেম্বরেই যখন তফসিল ঘোষণা করা হবে, তখন থেকেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নির্বাচনকে ঘিরে উত্তাপ ছড়াতে শুরু করবে। আর সবকিছু ঠিক থাকলে রোজার আগেই অনুষ্ঠিত হবে বহুল প্রত্যাশিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
repoter




