ছবি: -সংগৃহীত ছবি
রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় রবিবার বিকেলে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়ে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন ও নিয়োগ সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, বিসিএস পরীক্ষা হলো সরকারি চাকরিতে প্রবেশের মূল পথ। “যারা এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে, তারাই দেশের সরকার চালাবে। তাই এন্ট্রি পয়েন্টে কোনো অনিয়ম হলে পুরো ব্যবস্থার ওপর প্রভাব পড়বে,” প্রধান উপদেষ্টা বলেন। তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, বিদ্যমান সমস্যাগুলো দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সমাধান করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “যারা ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনা করবে, তাদের জন্যই এ সংস্কার অপরিহার্য। পরীক্ষা ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করা হবে যাতে জনগণের আস্থা বজায় থাকে। সমস্যার সমাধান করতে হলে সবার মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, নিয়মিত ক্যালেন্ডার মেনে পরীক্ষার আয়োজন করা হলে শুধু চাকরিপ্রার্থীরাই নয়, সার্বিক সরকারি সেবা ক্ষেত্রেও স্থায়িত্ব ও নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত হবে।
এ সময় সরকারি কর্ম কমিশনের আর্থিক স্বায়ত্তশাসন ও প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়েও আলোচনা করা হয়। কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম জানান, পিএসসি ইতোমধ্যেই পাঁচ বছরের রোডম্যাপ তৈরি করেছে এবং এর আওতায় প্রতিটি বছরের নভেম্বর থেকে পরবর্তী বছরের অক্টোবর পর্যন্ত পরীক্ষা ও নিয়োগ সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, “এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের প্রক্রিয়া আরও দ্রুত, নির্ভরযোগ্য এবং স্বচ্ছ হবে।”
কমিশনের সদস্যরা জানান, গত ১৫ বছরে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে বিসিএস পরীক্ষায় নানান ধরনের অনিয়ম দেখা গেছে। এসবের মধ্যে ছিল স্বজনপ্রীতি, প্রশ্নফাঁস এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অগোছালো ব্যবস্থাপনা। নতুন সংস্কার কার্যক্রমের মাধ্যমে এসব অনিয়ম পুনরায় প্রতিহত করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের মান উন্নীত করা হচ্ছে যাতে চাকরিপ্রার্থীরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার মানেও প্রস্তুতি নিতে সক্ষম হন।
বৈঠকে কমিশনের সদস্যরা আরও জানান, পিএসসি এখন এমনভাবে কাজ করছে যাতে পরীক্ষার প্রতিটি ধাপ স্বচ্ছ ও কার্যকর হয়। এই প্রক্রিয়ার ফলে চাকরিপ্রার্থী ও সাধারণ জনগণের আস্থা অর্জন করা সম্ভব হবে। সদস্যরা বলেন, “পূর্বের অনিয়মগুলোর পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, সে জন্য কার্যকর নিয়মাবলী এবং নিরীক্ষা প্রক্রিয়া প্রবর্তন করা হয়েছে।”
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো: মোখলেস উর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজউদ্দিন মিয়া, পিএসসি সদস্য মো. সুজায়েত উল্যা, মো. জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া, অধ্যাপক ড. এম সোহেল রহমান, অধ্যাপক ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. শাহনাজ সরকার এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের সচিব ড. মো. সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস ও পিএসসি কর্মকর্তারা একমত পোষণ করেন যে, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের এই ‘এন্ট্রি পয়েন্ট’ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এতে শুধু চাকরিপ্রার্থীরাই নয়, পুরো সরকারি সেবা ব্যবস্থার কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া, নিয়মিত ক্যালেন্ডার অনুসারে পরীক্ষার আয়োজন করলে প্রতিটি ধাপ পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন হবে, যা দীর্ঘমেয়াদে সরকারি চাকরির মান ও আস্থাকে বৃদ্ধি করবে।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, পিএসসি আগামী বছরের নভেম্বর থেকে পরবর্তী বছরের অক্টোবরের মধ্যে নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা ও নিয়োগ সম্পন্ন করবে। এছাড়া কমিশন নিয়ন্ত্রণে থাকবে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের মান, স্বচ্ছতা ও প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে হবে। কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেন যে, এই পদক্ষেপ শিক্ষার্থী, চাকরিপ্রার্থী এবং সাধারণ জনগণের আস্থা পুনঃস্থাপন করবে এবং ভবিষ্যতের সরকারি কর্মসংস্থান প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করবে।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের নির্দেশনার মাধ্যমে স্পষ্ট করা হয়েছে, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও নিয়মিত ক্যালেন্ডার মেনে পরীক্ষার আয়োজন নিশ্চিত করা হবে। এই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের জন্য স্বস্তির বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
repoter




