ছবি: ছবি: সংগৃহীত
অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বরে দেশের রাজনৈতিক সহিংসতার সংখ্যা কমেছে, তবে রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও সহিংসতার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। এছাড়াও, নারী ও শিশু নির্যাতন, সাংবাদিক নির্যাতন, এবং সীমান্ত হত্যা অব্যাহত থাকায় মানবাধিকার পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হয়ে উঠেছে। শনিবার মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায়।
এমএসএফের মতে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও তাদের সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে তৈরি এই প্রতিবেদন নভেম্বরে দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির একটি উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরে।
রাজনৈতিক সহিংসতা ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নভেম্বরে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৯টি ঘটনায় ৪১৪ জন হতাহত হয়েছেন। নিহত হয়েছেন ৭ জন, যাদের মধ্যে ১ জন নারী ও ৬ জন পুরুষ। আহত হয়েছেন ৪০৭ জন, যাদের মধ্যে ১৭ জন গুলিবিদ্ধ।
বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ঘটনায় ২৮টি সহিংসতা হয়েছে, যা দলের অভ্যন্তরীণ ভঙ্গুর অবস্থাকে প্রকাশ করে। এছাড়া, আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে ৫টি, আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল ১টি এবং বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে ৩টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়াও, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীদের ওপর দুষ্কৃতিকারীদের হামলার ৩৬টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ১৩ জন নিহত এবং ৪৩ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৯ জন আওয়ামী লীগ, ৩ জন বিএনপি এবং ১ জন জামায়াতে ইসলামের নেতা-কর্মী।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংঘর্ষ
শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, চা খাওয়া, চিকিৎসায় অবহেলা, কটূ কথা, বা বাসে ওঠা নিয়ে বিবাদ থেকে শিক্ষার্থীরা হামলা-পাল্টা হামলায় জড়িয়ে পড়ছে। এ ধরনের চারটি বড় সংঘর্ষে আহত হয়েছেন প্রায় ২২২ জন, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।
সাংবাদিক নির্যাতন
নভেম্বরে সাংবাদিক নির্যাতনের ৩২টি ঘটনায় ৩১ জন বিভিন্নভাবে আক্রান্ত হয়েছেন। ১৮ জন সাংবাদিক দায়িত্ব পালনের সময় সরাসরি হামলার শিকার হয়েছেন, ৯ জন হুমকি ও লাঞ্ছনার শিকার এবং একজনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মামলা হয়েছে। বাংলা দৈনিক যুগান্তরের তিনজন সাংবাদিককে আদালত অবমাননার রুলে জড়ানো হয়েছে।
সীমান্ত পরিস্থিতি
সীমান্তে হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা অব্যাহত থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এমএসএফ। বিএসএফের কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় সীমান্তে হত্যা ও আটক হওয়ার ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না।
নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা কিছু ক্ষেত্রে কমলেও হত্যা, আত্মহত্যা, এবং পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। নভেম্বর মাসে ৩২০টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, যা গত মাসের তুলনায় ৩২টি বেশি।
ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২৯টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ৭টি এবং ধর্ষণ ও হত্যা ২টি। পাঁচজন প্রতিবন্ধী শিশু ও কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এমএসএফ বলছে, যথাযথ আইন থাকা সত্ত্বেও অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকর ভূমিকা অনুপস্থিত।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্রমবর্ধমান ঘটনাগুলো রোধে এমএসএফ রাজনৈতিক শান্তি প্রতিষ্ঠা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ও নাগরিক জীবনে নিরাপত্তার নিশ্চয়তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
repoter