ফুলপুরে রাতের আঁধারে ট্র্যাজেডি, জনরোষে দগ্ধ বাস—আহতদের হাসপাতালে, এলাকায় শোকের ছায়া

ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায় একটি বাস ও মাহিন্দ্রা যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ গেল অন্তত ৬ জনের। শুক্রবার (২০ জুন) রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার কাজিয়াকান্দা ইন্দিরারপার এলাকায় ঘটে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে একজন নারীও রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, তবে তাৎক্ষণিকভাবে নিহত ও আহতদের পরিচয় জানা যায়নি।

ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাজধানীমুখী শ্যামলী বাংলা পরিবহনের একটি বাস ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে হালুয়াঘাটের দিকে যাচ্ছিল। পথে কাজিয়াকান্দা ইন্দিরারপার এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মাহিন্দ্রা যানের সঙ্গে বাসটির তীব্র সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ এতটাই ভয়াবহ ছিল যে মাহিন্দ্রাটি মুহূর্তেই দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই ছয়জনের প্রাণহানি ঘটে। আহত হন আরও কয়েকজন যাত্রী, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। হতাহতের ভয়াবহতায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে স্থানীয় জনতা। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে বিক্ষুব্ধ জনতা দুর্ঘটনাকবলিত বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তেই বাসে ছড়িয়ে পড়ে আগুন, পরিস্থিতি সামাল দিতে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ফুলপুর ফায়ার সার্ভিস ইউনিট। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দীর্ঘ প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

ফুলপুর ফায়ার স্টেশনের ইনচার্জ লুৎফর রহমান বলেন, ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থল থেকে ছয়জনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আহতদের উদ্ধার করে দ্রুত ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল হাদি জানান, বাস ও মাহিন্দ্রার মুখোমুখি সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হয়েছেন এবং আরও কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এখনো নিহত ও আহতদের নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের যৌথ ব্যবস্থাপনায় লাশ হস্তান্তর ও আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার ফলে হালুয়াঘাট-ময়মনসিংহ সড়কে দীর্ঘ সময় ধরে যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে এবং যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এ দুর্ঘটনা পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। নিহতদের পরিবারের আহাজারি ও স্থানীয়দের ক্ষোভে বিষণ্ন হয়ে ওঠে পরিবেশ। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন ও ট্রাফিক বিভাগ। অতিরিক্ত গতি, অসতর্কতা বা যানবাহনের যান্ত্রিক ত্রুটি—সবগুলো দিক বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এদিকে, এই দুর্ঘটনা আবারও দেশের সড়ক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সাধারণ মানুষ যেমন অসহায়ভাবে প্রাণ হারাচ্ছেন, তেমনি ঘন ঘন সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষোভ বাড়ছে জনমনে। সড়ক নিরাপত্তায় আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।