ছবি: ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ হবে এমন এক দেশ, যা “মায়ের চোখে বাংলাদেশ”-এর মতো মানবিক, সাম্যভিত্তিক ও নিরাপদ হবে। ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’-এর প্রথম বার্ষিকীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক দীর্ঘ ভাষণে তিনি দেশের জনগণের উদ্দেশে এই প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
তারেক রহমান বলেন, ১৯৭১ সাল ছিল স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধ, আর ২০২৪ সাল ছিল স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ। তিনি উল্লেখ করেন, স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণ দীর্ঘ দেড় দশক ধরে চলা ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের অবসান ঘটিয়েছে। শহীদের রক্ত, জনগণের প্রতিরোধ ও ছাত্র-জনতার ঐক্যের মাধ্যমেই ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশ হয়েছে রাহুমুক্ত। সেই দিনটি স্মরণীয় করে রাখতেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দিনটিকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
তারেক রহমান বলেন, সাবেক শাসক ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন কোনো সাধারণ ঘটনা ছিল না। তিনি দাবি করেন, এই দিনে গণভবন ছেড়ে স্বৈরশাসক পালিয়েছিল, সংসদ সদস্য, প্রধান বিচারপতি, প্রধান খতিব, মন্ত্রীরা, এমনকি প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরাও নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দেশ ছাড়ে। দেশের ইতিহাসে এমন ঘটনাকে নজিরবিহীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি কেবল বাংলাদেশের নয়, বিশ্বের রাজনীতির ইতিহাসেও বিরল।
তিনি অভিযোগ করেন, সাবেক স্বৈরাচার দেশকে গুম, খুন, নির্যাতন, অপহরণ, দুর্নীতি ও দমন-পীড়নের নরকে পরিণত করেছিল। গণতন্ত্রকামী মানুষের কণ্ঠরোধ করতে দেশে গড়ে তোলা হয়েছিল ‘আয়নাঘর’ নামের গোপন বন্দিশিবির। বহু মানুষকে সেখান থেকে আর ফেরত আনা যায়নি। বিএনপির সাবেক এমপি ইলিয়াস আলী ও কমিশনার চৌধুরী আলমের নিখোঁজ থাকার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, এই দীর্ঘ আন্দোলনে লাখো নেতাকর্মী ও জনগণ ঘরবাড়ি হারিয়েছে, পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন দেড় হাজারের বেশি মানুষ এবং আহত হয়েছেন প্রায় ৩০ হাজার। বহু মানুষ পঙ্গু হয়ে গেছেন, কেউ কেউ চোখ হারিয়ে আজীবনের জন্য অন্ধ হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, শিশু, নারী, বৃদ্ধ, শ্রমিক, সাংবাদিক, শিক্ষক— কেউই ফ্যাসিস্টের গুলির নিশানা থেকে রেহাই পায়নি।
তিনি আরও বলেন, শহীদদের রক্তে স্নাত রাজপথেই গড়ে উঠেছে ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য, যা আর কখনো ভাঙবে না। বাংলাদেশে আর কোনোদিন ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে দেওয়া হবে না, কাউকে গণতন্ত্র হত্যা করতে দেওয়া হবে না, এবং বাংলাদেশকে আর কোনো তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত হতে দেওয়া হবে না। তিনি মনে করেন, এই বিষয়গুলোতে জাতিগত ঐক্য অটুট আছে এবং থাকবে।
তারেক রহমান বলেন, ৭১ সালের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের মতোই, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের বাংলাদেশ কখনো ভুলবে না। এই শহীদদের ঋণ শোধের পথ হলো ইনসাফভিত্তিক, মানবিক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠন। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করে, সমাজে সাম্য ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই শহীদদের প্রতি দায় পরিশোধ করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করে যাচ্ছে। জনগণের ভোটের মাধ্যমে জবাবদিহিমূলক ও দায়বদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। স্বাধীনতার পরবর্তীকালে তিন-সাড়ে তিন বছরের শাসন বাদ দিলে, দেড় দশকের ফ্যাসিস্ট শাসনের সঙ্গে আর কোনো সময়ের তুলনা চলে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তারেক রহমান রাজনৈতিক ভিন্নমতকে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হিসেবে তুলে ধরেন এবং বলেন, মতানৈক্য যেন ফ্যাসিবাদ, চরমপন্থা বা উগ্রবাদের পুনরুত্থানের কারণ না হয়, সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে। রাজনৈতিক এজেন্ডা নিয়ে জনগণের আদালতে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি এবং বলেন, গ্রহণযোগ্যতা নির্ধারণ করবে জনগণ।
তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার থেকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা না হলে, রাষ্ট্রে প্রকৃত জনগণের ক্ষমতা কখনোই প্রতিষ্ঠিত হবে না। জনগণের রাজনৈতিক অধিকার চর্চার সুযোগ তৈরি না করলে, কোনো ব্যবস্থা টেকসই হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তারেক রহমান ভাষণের শেষে বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিজয়ের দিনে তিনি বলেছিলেন, বিজয়ীদের কাছে পরাজিতরাও নিরাপদ থাকলে বিজয়ের মহিমা বৃদ্ধি পায়। সেই কথার পুনরাবৃত্তি করে তিনি সবাইকে আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার অনুরোধ জানান। তিনি মব ভায়োলেন্স পরিহারের আহ্বান জানিয়ে বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা নয়, অন্যের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণই হোক নতুন বাংলাদেশের চেতনা।
repoter

