
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী শ্রীবরদী উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে চোরাকারবারি ও অবৈধ বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত বালু মাসুদ ওরফে ‘ডন মাসুদ’ আট দিনের মাথায় জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। গত ১৩ এপ্রিল তিনি পৃথক দুটি মামলায় জামিনে ছাড়া পেয়ে এলাকায় ফিরেই তার বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের বিভিন্নভাবে হত্যার হুমকি দিতে শুরু করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে স্থানীয় জনগণের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে ‘ডন মাসুদ’ ভারতীয় সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে চোরাচালান ও গরু চুরির মতো কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন। পাশাপাশি, পাহাড়ি নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মাধ্যমেও তিনি অর্থবিত্ত গড়ে তোলেন।
৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় যখন ফ্যাসিস্ট চক্র এলাকা ছাড়ে, তখন মাসুদ নিজের পরিচয় পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের নাম ব্যবহার করে নিজেকে দলীয় নেতা হিসেবে প্রচার করতে থাকেন। কিন্তু তার চোরাকারবারি এবং অবৈধ বালু উত্তোলনের কার্যক্রম আগের মতোই অব্যাহত থাকে।
এ বিষয়ে এলাকাবাসী সচেতন হয়ে তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন, প্রতিবাদ কর্মসূচি ও সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এছাড়াও, মাসুদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ ও বালু মহালের রশিদ জালিয়াতির মামলা দায়ের করা হয়। এসব প্রতিবাদেও মাসুদ থেমে যাননি। বরং আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন এবং নিরন্তরভাবে অবৈধ বালু ব্যবসা চালিয়ে যেতে থাকেন।
তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জেলা প্রশাসন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি। অভিযোগ রয়েছে, অদৃশ্য প্রভাবের কারণে তাকে দীর্ঘদিন ধরে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।
অবশেষে গত ৫ এপ্রিল র্যাব-১৪ এর একটি টিম ‘ডন মাসুদ’-কে গ্রেপ্তার করে শ্রীবরদী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পরদিন আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। তার গ্রেপ্তারের খবরে স্থানীয় সচেতন মহল সন্তোষ প্রকাশ করে এবং শেরপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ও শ্রীবরদী উপজেলায় পৃথক দুটি মানববন্ধনের আয়োজন করে মাসুদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, মাত্র ৮ দিনের মাথায় ১৩ এপ্রিল তিনি জামিনে মুক্তি পান। জামিনে বেরিয়ে আসার পর তাকে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা ও ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেয় তার অনুসারীরা। শোভাযাত্রার মাধ্যমে তাকে শ্রীবরদী শহর থেকে নিজ গ্রামের বাড়ি কর্ণঝড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়।
জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পরপরই তিনি তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী স্থানীয় আন্দোলনকারীদের বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘আমাদের শ্রীবরদী’ নামের একটি ফেসবুক পেইজে তার ফুলের মালা পরিহিত ছবিসহ পোস্টে লেখা হয়েছে, “অবৈধ বালু ব্যবসায়ী ডন মাসুদ মাত্র ৮ দিনের মাথায় জামিনে মুক্ত”। এতে জনমনে আতঙ্ক ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে।
আন্দোলনকারীদের মতে, এভাবে একজন কুখ্যাত চোরাকারবারিকে আইনের ফাঁক গলে জামিনে মুক্ত করে পুনরায় এলাকায় হুমকির পরিবেশ তৈরি করা বিচারব্যবস্থার ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট করছে। এলাকাবাসীর দাবি, প্রশাসন যেন পুনরায় মাসুদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
repoter