ছবি: -সংগৃহীত ছবি
ইহুদি সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় ইরানের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে অস্ট্রেলিয়া। প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে ইরানের রাষ্ট্রদূত আহমাদ সাদেঘি ও আরও তিনজন কর্মকর্তাকে সাত দিনের মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া নিজ দেশের কূটনীতিকদেরও তেহরান থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ান সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স অর্গানাইজেশন (এএসআইও) জানিয়েছে, গত বছরের অক্টোবর মাসে সিডনির লুইস কন্টিনেন্টাল কিচেন নামের একটি কোশের খাদ্য কোম্পানি এবং ডিসেম্বর মাসে মেলবোর্নের আদাস ইসরায়েল সিনাগগে অগ্নিসংযোগের নির্দেশ দিয়েছিল ইরানি কর্তৃপক্ষ। তদন্তে প্রমাণ মিলেছে যে, এসব হামলার সঙ্গে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) শীর্ষ কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন।
অস্ট্রেলিয়ার গোয়েন্দা প্রধান মাইক বার্জেস বলেন, হামলাগুলোকে গোপন রাখার জন্য আইআরজিসি একটি জটিল প্রক্সি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেছে। তারা সংঘবদ্ধ অপরাধচক্র ও অপরাধীদের ভাড়াটে হিসেবে নিয়োগ করে হামলা পরিচালনা করেছে। বার্জেস আরও জানান, এই হামলাগুলো ছিল সমাজে বিভেদ সৃষ্টি ও সামাজিক সংহতি দুর্বল করার প্রচেষ্টা।
প্রধানমন্ত্রী অ্যালবানিজ সাংবাদিকদের বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার দীর্ঘ তদন্তের ফলাফল উদ্বেগজনক। তিনি ঘটনাগুলোকে ‘অস্বাভাবিক ও বিপজ্জনক আগ্রাসী কর্মকাণ্ড’ হিসেবে বর্ণনা করেন। মেলবোর্নের সিনাগগে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় উপাসনাকারীদের জীবন নিয়ে পালাতে হয়েছিল। বিশেষত, ওই সিনাগগটি ১৯৬০-এর দশকে হলোকাস্ট থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা ঘটনার ভয়াবহতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
ইরানের পক্ষ থেকে অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, রাষ্ট্রদূত বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপের ফল। তবে অস্ট্রেলীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত কয়েক মাস ধরে সিডনি ও মেলবোর্নে যেসব ইহুদি–বিদ্বেষী হামলা হয়েছে, তার সঙ্গে ইরানের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততার প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে।
২০২৩ সালে ইসরায়েল–হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই অস্ট্রেলিয়ার বড় শহরগুলোতে ইহুদিদের বাড়ি, স্কুল, গাড়ি ও ধর্মীয় স্থাপনায় একাধিক হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানুয়ারিতে ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, এসব হামলার পেছনে বিদেশি প্রভাবশালী শক্তি জড়িত থাকতে পারে। পাশাপাশি, একই সময়ে ইসলামবিদ্বেষী ঘটনার সংখ্যাও বেড়ে যায় বলে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন নথিভুক্ত করেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওয়ং বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটাই প্রথমবার অস্ট্রেলিয়া কোনো দেশের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিল। তিনি এটিকে অস্ট্রেলিয়ার সার্বভৌমত্ব ও সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য জরুরি পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেন।
অস্ট্রেলীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। একদিকে ইরান অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত; অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া বলছে, তাদের হাতে এমন প্রমাণ আছে যা উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। ফলে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক এখন এক অনিশ্চিত ও সংকটময় পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে গেছে।
repoter

