ছবি: ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিল করে ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (বিআইটি)-এর আদলে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুপুরে নগরীর টাউন হল মোড়ের জুলাই চত্বরে জড়ো হয়ে তারা আন্দোলন শুরু করেন এবং ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়ে দাবি আদায়ের আলটিমেটাম দেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে তারা এ দাবি জানিয়ে আসছেন এবং এ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি দিয়েছেন। পাশাপাশি নিজেদের ক্যাম্পাসে পথনাট্য, বিতর্ক, পোস্টারিংসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের দাবির কোনো লিখিত সমাধান বা নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, দাবি আদায়ের পরিবর্তে তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। আন্দোলন চালিয়ে গেলে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে এবং এমনকি প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বাস্তব সমস্যার সমাধানে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন তারা।
বিক্ষোভকারীরা দুপুর ১টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচে এসে অবস্থান নেন এবং দাবি মেনে নেওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেন। তারা জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লিখিতভাবে দাবি পূরণে অগ্রগতি না হলে বরিশাল, ফরিদপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহের চারটি সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি পালন করবেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সালমান বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যার সমাধান চাইলেও কেউ আমাদের কথা শুনছে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন পর্যন্ত সবাই উদাসীন আচরণ করছে। আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খেলছে তারা।”
তিনি বলেন, “গত ৯ জুলাই সড়ক অবরোধ কর্মসূচির সময় জেলা প্রশাসক শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা বারবার সংলাপ চাইছি, অথচ বারবারই আমাদের অবহেলা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা আর বসে থাকব না।”
বিক্ষোভে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী শিবাজি রায় মৃদুল, ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আশরাফ, মুবিন, কামরুল ইসলাম, রনি এবং আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, দেশের সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোকে বিআইটি মডেলে পরিচালনার কথা বহুদিনের দাবি হলেও আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে একাডেমিক স্বীকৃতি, গবেষণা সুযোগ ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে।
বিক্ষোভকারীরা আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তির ফলে স্বাধীনভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। ভর্তি, সেশন, পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশে জটিলতা বেড়েছে। এছাড়া গবেষণা ও প্রযুক্তি খাতে উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিগত ও প্রশাসনিক স্বাধীনতা থেকেও তারা বঞ্চিত হচ্ছেন।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, জেলা প্রশাসক শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের জন্য সংশ্লিষ্ট সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সেই অনুযায়ী সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী সপ্তাহে বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ হয়ে যাবে বলেও তিনি জানান।
সার্বিক পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের দাবি ও উদ্বেগ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন মহল। তাদের মতে, দেশের কারিগরি শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোর কাঠামো ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা পুনর্বিন্যাস এখন সময়ের দাবি।
repoter




