ছবি: ছবি: সংগৃহীত
শহরের ছয়টি ল্যাবে পরীক্ষা, সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী ধারা ভাবাচ্ছে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের
চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ফের উঁকি দিচ্ছে ভাইরাসটি। গত ২৪ ঘণ্টায় নগরের বিভিন্ন ল্যাব থেকে আরও ছয়জনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। ফলে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬ জনে।
শুক্রবার (২০ জুন) বিকেলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে দেখা যায়, গত একদিনে চট্টগ্রামের ছয়টি পৃথক ল্যাবে মোট ৮১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এই পরীক্ষার ফলাফলে ছয়জন নতুন করে করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হন, যা জনমনে ফের উদ্বেগ ছড়িয়েছে।
নমুনা পরীক্ষার পরিসংখ্যান অনুসারে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ১৩টি, শেভরনের ল্যাবে ১৬টি, মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে ১৩টি, ন্যাশনাল হাসপাতালে ১৭টি, মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ১০টি এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে ১২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ল্যাবে একজন, শেভরনের ল্যাবে দুইজন, ন্যাশনাল হাসপাতালে একজন এবং মেট্রোপলিটন হাসপাতালে দুইজনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মোট ৮১টি নমুনা পরীক্ষায় ছয়জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। এঁরা সবাই নগরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। আমাদের পক্ষ থেকে আক্রান্তদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, নতুন সংক্রমণগুলোর উৎস অনুসন্ধানে কাজ চলছে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
চট্টগ্রামের এই সাম্প্রতিক সংক্রমণ বৃদ্ধির খবরে জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা চিন্তিত। তাদের মতে, এমন সময়ে যখন মানুষ করোনা নিয়ে প্রায় নির্ভার হয়ে পড়েছে, তখন হঠাৎ এমন বাড়তি সংক্রমণ ভবিষ্যতের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ না করাই এই সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হতে পারে। অনেকেই মাস্ক পরা বা সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
এদিকে, চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে আইসোলেশন ব্যবস্থা ও নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রতিটি নতুন শনাক্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্ত করার পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক সুরক্ষা পরিকল্পনা প্রস্তুতের কাজ শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের প্রতি সচেতনতার আহ্বান জানিয়ে বলছে, করোনা এখনও পুরোপুরি নির্মূল হয়নি। যেকোনো সময় এটি নতুন রূপে ফিরে আসতে পারে, যার প্রমাণ গত ২৪ ঘণ্টার সংক্রমণ।
স্বাস্থ্যবিভাগের কর্মকর্তারা মনে করছেন, এটি হয়তো নতুন সংক্রমণ ঢেউয়ের শুরু না হলেও এক ধরনের সতর্ক সংকেত হতে পারে। তাই এখনই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে সবার সম্মিলিত দায়িত্ব—ব্যক্তিগত সুরক্ষা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের এখনই প্রয়োজনীয় সচেতনতা অবলম্বনের মাধ্যমে নতুন করে সংক্রমণের বিস্তার রোধ করা। নতুবা অতীতের ভয়াবহতা ফের ফিরে আসতে সময় লাগবে না।
করোনার এ নতুন সংক্রমণ যদি উপেক্ষিত হয়, তবে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর এক বড় চাপ তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
repoter





