ছবি: ছবি: সংগৃহীত
আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধিতে ২০২৫ সালের শুরু থেকে কার্যকর হচ্ছে রিস্ক বেইজড সুপারভিশন পদ্ধতি
বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে স্বচ্ছতা ও কার্যকর তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন নজরদারি কাঠামো চালু করতে যাচ্ছে। ব্যাংক খাতে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বাড়ানো এবং আর্থিক খাতের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ‘রিস্ক বেইজড সুপারভিশন’ (আরবিএস) পদ্ধতি প্রবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আগামী ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে দেশের সব তফসিলি ব্যাংকে এই পদ্ধতি কার্যকর হবে। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, আরবিএস পদ্ধতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ২০টি ব্যাংকে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে দেশের সকল তফসিলি ব্যাংককে এই কাঠামোর আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।
গভর্নর বলেন, রিস্ক বেইজড সুপারভিশন পদ্ধতি মূলত ঝুঁকি মূল্যায়ন, পরিকল্পনা ও পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে ব্যাংকিং কার্যক্রম তদারকি করবে। এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি পরিচালনা কাঠামো শক্তিশালী হবে এবং অনিয়ম বা সম্ভাব্য সংকটগুলো আগেভাগেই চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।
এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক আরবিএস ফ্রেমওয়ার্ক প্রণয়ন করেছে এবং তা বাস্তবায়নের জন্য সাংগঠনিক কাঠামোয় কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচিও গ্রহণ করা হয়েছে।
তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য রেশনালাইজড ইনপুট টেমপ্লেট (আরআইটি) নামক একটি তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ পদ্ধতি চালু করা হবে, যার মাধ্যমে তফসিলি ব্যাংকগুলোর পারফরম্যান্স ও ঝুঁকি মূল্যায়ন আরও কার্যকরভাবে পরিচালিত হবে।
আরবিএস পদ্ধতির আওতায় ব্যাংকগুলোর আর্থিক, পরিচালন ও প্রশাসনিক ঝুঁকি চিহ্নিত করে তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর ফলে, অনিয়ম রোধ এবং ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় জবাবদিহিতা বাড়বে বলে আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও পরিচালকদের সঙ্গে একাধিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাশাপাশি তফসিলি ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গেও আরবিএস পদ্ধতি বাস্তবায়ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
গভর্নর বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাত এখন আর্থিক প্রবৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। এই খাতকে ঝুঁকিমুক্ত ও সুশাসনসম্মত করতে রিস্ক বেইজড সুপারভিশন সময়োপযোগী একটি পদক্ষেপ। এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে এবং দেশের আর্থিক খাত আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, এই পদ্ধতি কার্যকর হলে দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংকিং খাতের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিও লাভবান হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে, আরবিএস কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ব্যাংক খাতে সুসংহত স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবে।
repoter


