
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকারিতা ও দায়িত্ব পালনের সক্ষমতা নিয়ে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মাঝে যে সংশয় তৈরি হচ্ছে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। রাজধানীর খামারবাড়ি বার্ক অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ইস্টার পুনর্মিলনী ও শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে শুক্রবার (৯ মে) ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
তারেক রহমান বলেন, দেশে চলমান অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে নানা প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। সরকার প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে কতটা প্রস্তুত ও সক্ষম, সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। এর পেছনে নানা ঘটনা ও আচরণের ভূমিকা রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, অতীতে স্বৈরাচারী শাসনামলে অনেক নাগরিক গুম হয়েছেন। তাদের মধ্যে ছিলেন সাজিদুল ইসলাম সুমনও। ২০১৪ সালে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের নিয়ে গঠিত হয় ‘মায়ের ডাক’ নামের একটি সংগঠন, যারা এ বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়ে আসছে।
এই প্রেক্ষাপটে তারেক রহমান গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে—সম্প্রতি সুমনের বোনের বাসায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ, অথচ তারা বলছে, তারা নাকি সুমনের ব্যাপারে কিছুই জানত না। তিনি প্রশ্ন তোলেন, একজন গুম হওয়া ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে এমন আচরণ কেমন ধরনের বার্তা বহন করে?
তারেক রহমান আরও বলেন, এই ধরনের ঘটনা শুধু ভুক্তভোগীদের জন্য নয়, বরং পুরো সমাজের জন্য একটি আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার উৎস হয়ে দাঁড়ায়। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকার রক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হওয়া উচিত। কিন্তু যখন গুম হওয়া মানুষের পরিবারকেও হয়রানির মুখে পড়তে হয়, তখন তা গভীর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তার বক্তব্যে বলেন, যারা ক্ষমতায় আছে, তাদের দায়িত্ব জনগণের প্রতি জবাবদিহিমূলক আচরণ নিশ্চিত করা। কিন্তু যখন প্রশাসন বা সরকার জনগণের মৌলিক অধিকার ও মানবিক সম্মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়, তখন তা গণতন্ত্রের জন্য বড় ধরনের হুমকি তৈরি করে।
তারেক রহমান অনুষ্ঠানে আরও বলেন, এই মুহূর্তে দেশের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে একটি গ্রহণযোগ্য, কার্যকর এবং স্বচ্ছ সরকার গঠন। আর এর জন্য প্রয়োজন সবার অংশগ্রহণে গঠিত একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যারা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে এবং জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হবে।
অনুষ্ঠানে তিনি স্বাধীন মতপ্রকাশ, মানবাধিকারের সুরক্ষা এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সেই সঙ্গে তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান, গণতন্ত্র রক্ষায় সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ থাকাটা এখন সময়ের দাবি।
তারেক রহমানের বক্তব্যে একটি বিষয় স্পষ্ট ছিল—বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি জনআস্থার সংকট এবং অতীতের গুম-খুনের বিচারহীনতা দেশের জন্য একটি বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার মতে, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হচ্ছে জনগণের অধিকার ও সম্মান রক্ষায় কার্যকর রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করা।
repoter