ছবি: -সংগৃহীত ছবি
যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের আসন্ন যৌথ সামরিক মহড়া নিয়ে আবারও কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনের বোন ও শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কিম ইয়ো জং বলেছেন, এ মহড়া এক ধরনের ‘বেপরোয়া শক্তি প্রদর্শন’, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। রবিবার উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ এ খবর প্রকাশ করেছে।
সোমবার থেকে শুরু হয়ে শুক্রবার পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু দ্বীপ উপকূলে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই মহড়া। এতে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা বাহিনী অংশ নেবে। মূল লক্ষ্য হলো, পারমাণবিক অস্ত্রধারী উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান হুমকি মোকাবিলায় প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি আরও জোরদার করা।
বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রায় ২৮ হাজার ৫০০ মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। এ ছাড়াও দুই দেশ একত্রে সামরিক কৌশল ও প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা চর্চার জন্য একটি টেবিলটপ মহড়াও চালাচ্ছে। এ মহড়ার মধ্য দিয়েই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা দেখাতে চাইছে যে তারা উত্তর কোরিয়ার যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিতে প্রস্তুত।
কিন্তু পিয়ংইয়ংয়ের দৃষ্টিতে এসব মহড়া কেবলমাত্র প্রতিরক্ষা অনুশীলন নয়। কিম ইয়ো জং কেসিএনএতে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, “আমাদের সীমান্ত ঘেঁষে তাদের এই বেপরোয়া শক্তি প্রদর্শন ভুল জায়গায় করা হচ্ছে। এর ফলাফল হবে তাদের নিজেদের জন্য ভয়াবহ।” তিনি মহড়াটিকে ‘বিপজ্জনক চিন্তাধারা’ আখ্যা দেন এবং এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন।
উত্তর কোরিয়া বহুদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে যে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ মহড়া আসলে এক ধরনের আক্রমণাত্মক প্রস্তুতি। দেশটির মতে, এসব মহড়া আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে এবং উত্তর কোরিয়ার জন্য সরাসরি হুমকি তৈরি করে।
এই বিবৃতি এসেছে এমন এক সময়ে, যখন কিম জং উন সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ার একটি অস্ত্র গবেষণা কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। সেখানে তিনি আবারও ঘোষণা দেন যে, পিয়ংইয়ং তার ‘দ্বৈত নীতি’ চালিয়ে যাবে—একদিকে পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়ন এবং অন্যদিকে প্রচলিত সামরিক শক্তি বৃদ্ধি। তার মতে, উত্তর কোরিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর থেকে পিয়ংইয়ং স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে তারা আর কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি ত্যাগ করবে না। বরং দেশটি নিজেকে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ‘অপরিবর্তনীয় পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
এদিকে, ইউক্রেন যুদ্ধও উত্তর কোরিয়ার অবস্থানকে আরও দৃঢ় করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, হাজার হাজার উত্তর কোরীয় সৈন্য রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করতে ইউক্রেনে পাঠানো হয়েছে। এর মাধ্যমে কিম জং উন মস্কোর কাছ থেকে কৌশলগত সমর্থন নিশ্চিত করেছেন। গত বছর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন উত্তর কোরিয়া সফরকালে দুই দেশের মধ্যে একটি পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই সামরিক মহড়া ও হুঁশিয়ারির পাল্টাপাল্টি বিবৃতির ফলে পূর্ব এশিয়ায় নতুন করে উত্তেজনা বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা যেখানে উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক হুমকির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিতে চাইছে, সেখানে কিম জং উন নেতৃত্বাধীন শাসনব্যবস্থা তা দেখছে নিজেদের সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষেপ হিসেবে। ফলে দুই পক্ষের এই দ্বন্দ্ব দীর্ঘস্থায়ী ও আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে।
সূত্র: আল-জাজিরা, রয়টার্স।
repoter

