ঢাকা,  শুক্রবার
১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ , ০২:০৭ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ: ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল * গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, দেশে–বিদেশে উদ্বেগ * ঢাকা–দিল্লি সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা, আজ চালু থাকছে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র * ৬৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ জব্দ, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে গতি আনছে সরকার * যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ ফিরিয়ে আনছেন ট্রাম্প, সমালোচনার কেন্দ্রে ভেনেজুয়েলা অভিযান * পাবনার বেড়ায় স্পিডবোটে এসে বাজারে ডাকাতি, ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত * যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভেনেজুয়েলা অভিযান: মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে * ট্রাম্পের ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা: ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে নতুন জটিলতা * গুম ও মানবতাবিরোধী অভিযোগে ১৩ সেনা কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে * বিএনপির ৪০টির বেশি আসনে মনোনয়নসংক্রান্ত অসন্তোষ, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ব্যস্ত সমাধান খুঁজতে

যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় আহত ১১, ইসরায়েলি আঘাতে নিহত ৩ রেড ক্রিসেন্ট কর্মী

repoter

প্রকাশিত: ১২:২৭:৪৪পূর্বাহ্ন, ২২ জুন ২০২৫

আপডেট: ১২:২৭:৪৪পূর্বাহ্ন, ২২ জুন ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: ছবি: সংগৃহীত

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পর তেজস্ক্রিয়তা মেলেনি; মানবিক স্থাপনাগুলোতেও চলছে বিমান হামলা


ইরানের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পরিচালিত একটি সামরিক হামলায় দেশটির পারমাণবিক স্থাপনায় অন্তত ১১ জন ব্যক্তি সামান্য আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে সাতজন চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন সংস্থাটির প্রধান পীরহোসেইন কৌলিভান্দ।

সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়, আক্রান্ত স্থাপনাগুলো পারমাণবিক হলেও সেখানে কোনো ধরনের তেজস্ক্রিয়তা ছড়ায়নি। সব জায়গায় নিরাপত্তা পর্যালোচনা শেষে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে হামলার কারণে পারমাণবিক ঝুঁকি সৃষ্টি হয়নি।

একই সময় কৌলিভান্দ আরও জানান, ইসরায়েলের পৃথক আক্রমণে রেড ক্রিসেন্টের তিনজন উদ্ধারকর্মী নিহত হয়েছেন। এসব আক্রমণে সংস্থার একটি হেলিকপ্টারও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, “আমাদের তিনজন নিরীহ উদ্ধারকর্মী, যারা মানবিক সহায়তার দায়িত্বে ছিলেন, তারা ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন। এটা শুধু রেড ক্রিসেন্ট নয়, সমগ্র মানবতার ওপর এক বর্বর আঘাত।”

তবে এখানেই থেমে থাকেননি কৌলিভান্দ। তিনি আরও অভিযোগ করেন, ইসরায়েল যুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করছে। তারা হাসপাতাল, চিকিৎসাকেন্দ্র এমনকি প্রতিবন্ধী কেয়ার সেন্টারগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। এসব স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে পরিকল্পিতভাবে এবং এর পেছনে স্পষ্ট উদ্দেশ্য রয়েছে বলে তার দাবি।

রেড ক্রিসেন্ট প্রধান বলেন, “আমাদের এমন সব জায়গায় হামলা করা হয়েছে যেখানে আহত, অসুস্থ এবং প্রতিবন্ধী মানুষরা নিরাপত্তার আশায় আশ্রয় নিয়েছিল। এসব স্থানে হামলা মানবিক মূল্যবোধের সম্পূর্ণ বিপরীত। এটি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধের শামিল।”

হামলার সময় ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে দেশটির সরকারি পক্ষ থেকে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির কথা জানানো হয়নি, তবে হামলার পর রেড ক্রিসেন্টসহ অন্যান্য উদ্ধার সংস্থা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। আহতদের দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় এবং পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাড়ানো হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

ইরানের পারমাণবিক কর্মকাণ্ড বরাবরই পশ্চিমা বিশ্বের নজরদারির আওতায় থেকেছে। এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের এমন হামলা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। ইরান বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই হামলা শুধুমাত্র সামরিক দিক থেকেই নয়, বরং কূটনৈতিকভাবে এক জটিল অবস্থার জন্ম দিয়েছে।

বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং তৃতীয়পক্ষ পর্যবেক্ষকরাও রেড ক্রিসেন্টের ওপর হামলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অনেকেই একে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করছেন।

এদিকে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এসব হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, “যারা মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোকেও ছাড় দিচ্ছে না, তাদের মুখোশ উন্মোচন করা সময়ের দাবি।”

সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, নিহত কর্মীদের মরদেহ যথাযথভাবে দাফন এবং তাঁদের পরিবারের জন্য সহায়তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে, আহতদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে দেশের শীর্ষস্থানীয় হাসপাতালগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে।

ইরানের সাধারণ মানুষও এই হামলার প্রতিবাদে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। অনেকেই এসব হামলাকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ আখ্যা দিয়ে দ্রুত আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের দাবি জানান।

বর্তমানে পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে কড়া নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। সম্ভাব্য আর কোনো হামলা ঠেকাতে সশস্ত্র বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে রেড ক্রিসেন্টের উদ্ধার অভিযান ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রম যেন বিঘ্নিত না হয়, সে বিষয়েও সরকার থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, তাদের তৎপরতা অব্যাহত থাকবে এবং মানবিক দায়িত্ব পালনে তারা কখনো পিছপা হবে না। সংস্থাটির প্রধান বলেন, “মানবতার পক্ষে দাঁড়ানো কখনোই থেমে যাবে না, আমাদের প্রাণ গেলেও আমরা অসহায় মানুষের পাশে থাকব।”

এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক মহলের নজর আরও একবার ইরান-মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর কেন্দ্রীভূত হয়েছে। সাম্প্রতিক হামলা শুধু সামরিক বা কূটনৈতিক নয়, বরং মানবিক দিক দিয়েও এক গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।

repoter