ছবি: ছবি: সংগৃহীত
ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধের পর আশুরার শোক অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে দেশাত্মবোধক গান গাওয়ার আহ্বান জানান ইরানের সর্বোচ্চ নেতা
ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধ শেষে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে উপস্থিত হলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। শনিবার (৬ জুলাই) তেহরানে মহররম উপলক্ষে আয়োজিত এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। ইমাম হোসাইনের শহিদ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এই শোকানুষ্ঠানে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, বয়স আশির কোঠায় থাকা খামেনি মসজিদে প্রবেশ করে উপস্থিত মানুষের শুভেচ্ছা গ্রহণ করছেন।
অনুষ্ঠানে সরকারপন্থী খ্যাতনামা গায়ক মাহমুদ করিমিকে উদ্দেশ করে খামেনি বলেন, “তুমি যদি ক্লান্ত না হও, তবে ‘এই ইরান’ গানটি গাও।” যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে এই দেশাত্মবোধক গানটি ইরানে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, এমনকি ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও এর পরিবেশনা দেখা যাচ্ছে।
এই শোকানুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়েছিল তেহরানের হোসাইনিয়ায় বেইত-রাহবারিতে, যা ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতার সরকারি বাসভবনের একটি অংশ। খামেনির উপস্থিতি এবং বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচার করে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ৮৬ বছর বয়সী খামেনি কালো পোশাকে মঞ্চে উপস্থিত হন। উপস্থিত জনতা মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন— “আমাদের রক্ত, আমাদের নেতার জন্য!”—এটি ইরানের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আবেগের এক প্রতীকী প্রকাশ।
খামেনির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে জানানো হয়, পবিত্র আশুরার দিন উপলক্ষে আয়োজিত শোকানুষ্ঠানে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়। আয়াতুল্লাহ খামেনি এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ইসলামি বিপ্লবের প্রতি তার দায়বদ্ধতা এবং জাতির সঙ্গে সংহতির বার্তা দেন।
‘এই ইরান’ শিরোনামের দেশাত্মবোধক গানটির কথা লিখেছেন তুরজ নেগাহবান এবং সুর করেছেন মোহাম্মদ সারি। মূল গানটি গেয়েছেন প্রখ্যাত গায়ক মোহাম্মদ নূরি, তবে মাহমুদ করিমি এতে নিজস্ব কিছু পরিবর্তন এনেছেন।
অনুষ্ঠানে শিশুদেরও উপস্থিত থাকতে দেখা যায়, যাদের হাতে নিহত ইরানি সেনা কর্মকর্তাদের ছবি ছিল। এতে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, যুদ্ধের ক্ষত এখনও জাতীয় মনস্তত্ত্বে গভীরভাবে প্রভাব ফেলছে।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর টানা ২২ দিন আয়াতুল্লাহ খামেনিকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। এ সময়ে কেবল তিনটি পুরোনো রেকর্ড করা ভাষণ প্রচার করা হয় টেলিভিশনে। যুদ্ধ চলাকালীন নিহত শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের জানাজা এবং আশুরার মূল শোকানুষ্ঠানেও খামেনির অনুপস্থিতি জনগণের নজরে আসে।
প্রসঙ্গত, সাধারণত মহররম মাসের প্রথম রাতেই আয়াতুল্লাহ খামেনি নিজে শোকানুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন এবং ভাষণ দেন। তবে এবার শুধু বিচার বিভাগের প্রধান, নির্বাহী বিভাগের প্রতিনিধিরা এবং কিছু সামরিক কর্মকর্তাই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সর্বোচ্চ নেতার এই অনুপস্থিতিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলো স্বাভাবিকভাবে উপস্থাপন করতে চাইলেও জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়।
তবে যুদ্ধ-পরবর্তী পরিস্থিতিতে এই প্রথমবারের মতো খামেনির প্রকাশ্য উপস্থিতি এবং ‘এই ইরান’ গানের আহ্বান দেশবাসীর মধ্যে নতুন করে দেশপ্রেম জাগিয়ে তুলেছে বলে বিশ্লেষকদের মত। এটি খামেনির তরফ থেকে একটি প্রতীকী বার্তা—যুদ্ধ, শোক ও সংকটের মধ্যেও জাতীয় ঐক্য ও আত্মপরিচয় বজায় রাখার আহ্বান।
repoter

