ছবি: ছবি: সংগৃহীত
প্রতি বছর ৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে ভূমিধসের ঘটনা, যা দেশের অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো উদ্বেগজনক। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত এবং পার্বত্য অঞ্চলে মানুষের অপরিকল্পিত বসবাসের কারণে মৃত্যুহারও বাড়ছে। ২০২৪ সালে সারা দেশে ভূমিধসে ৩০ জনের প্রাণহানি হয়েছে, এর মধ্যে চট্টগ্রাম অঞ্চলে মারা গেছেন ২০ জন।বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) রাজধানীর গুলশানে লেকশোর হোটেলে সেভ দ্য চিলড্রেনের আয়োজনে ‘চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলায় ভূমিধস মোকাবিলায় অগ্রবর্তী পদক্ষেপ’ শীর্ষক একটি কর্মশালায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। কর্মশালায় ভূমিধস মোকাবিলার জন্য প্রটোকল তৈরি, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় উন্নত পূর্বাভাস ব্যবস্থা স্থাপন এবং কমিউনিটির সক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।কর্মশালায় সেভ দ্য চিলড্রেন-এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক ফাতিমা মেহেরুন্নেসা এবং রাইমসের জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আসিফ বিন আনোয়ার ভূমিধস নিয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। মেহেরুন্নেসা বলেন, প্রকল্পটির লক্ষ্য হলো চট্টগ্রাম ও বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যার মতো বহুমুখী ঝুঁকির জন্য আগাম প্রস্তুতি নিশ্চিত করা। প্রকল্পের আওতায় লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান), চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং বাঁশখালীর ৪০ হাজার ৫৪০ জন উপকারভোগীর জীবনমান উন্নত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।উপস্থাপনায় উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে ১৫টি বড় দুর্যোগে সারা বিশ্বে ৪ কোটি ২০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়, যার মধ্যে ৯৪ লাখ মানুষ গৃহহীন হন। এক হাজার ৫৩ জন মারা যান এবং ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারে।২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ভূমিধসের ঘটনাগুলোর রেকর্ড অনুযায়ী, দেশে গড়ে প্রতি বছর ১৯টি উল্লেখযোগ্য ভূমিধসের ঘটনা ঘটে, যা প্রতিবছর গড়ে ৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে ২০০৭ সালের ১১ জুন একক বৃষ্টিপাতের ঘটনায় ১০০টি ভূমিধস ঘটে, যার ফলে মৃত্যু হয় ১২৭ থেকে ১৩৫ জন মানুষের।২০২৪ সালের ১৮ ও ১৯ জুন ভারী মৌসুমি বৃষ্টিপাতে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে ৭৭৩টি ভূমিধসের ঘটনা ঘটে, যা প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গত বছর চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে।কর্মশালায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুর রহমান ভূমিধস বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে সেভ দ্য চিলড্রেন জানায়, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পাহাড়ে অপরিকল্পিত বসবাসই প্রধান কারণ। এছাড়া, ২০০৭ ও ২০১৭ সালে ভূমি ধসে মৃত্যুর হার বেশি থাকার পেছনে উন্নয়নমূলক কাজ এবং অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত দায়ী ছিল।সেভ দ্য চিলড্রেন জানায়, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য এলাকা বিশেষ করে চট্টগ্রাম, সিলটি ক্লে লোম মাটি (৬৭ শতাংশ) দ্বারা গঠিত, যা পানি ধারণক্ষমতায় দুর্বল। টানা তিন দিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও জলবায়ু পরিবর্তন ভূমিধসের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঢালে বসবাসরত মানুষ ঘরবাড়ি ও জীবিকার ক্ষতির পাশাপাশি মৌলিক সেবার ব্যাঘাতে ভোগে।কর্মশালায় জানানো হয় যে, পার্বত্য অঞ্চলের ৬৫ শতাংশ মানুষ খাস জমিতে বসবাস করেন এবং ৩৩ শতাংশ মানুষ দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে একবার হলেও ভূমিধসের শিকার হয়েছেন।সেভ দ্য চিলড্রেনের হিউম্যানিটারিয়েন ডিরেক্টর মো. মোশতাক হোসাইন বলেন, বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ দেশ। সাইক্লোন, খরা, বন্যা, বজ্রপাত এবং ভূমিধস প্রতিবছর ঘটে। তবে ভূমিধস নিয়ে কার্যক্রম কখনো নেওয়া হয়নি।প্রধান অতিথি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আবদুল ওয়াদুদ বলেন, প্রকৃতির মধ্যে অনুপ্রবেশ শুরু হওয়ার পর থেকেই সমস্যা শুরু হয়েছে। সরকার ভূমিধসে নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে এবং এ বিষয়ে আগে থেকেই সতর্ক বার্তা জারি করার বিষয়ে কাজ চলছে।অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নিতাই চন্দ্র দে সরকার।
repoter