
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাতের অভিযোগে যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টি থেকে নির্বাচিত এমপি ও ট্রেজারি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে তার দায়িত্ব থেকে বিরত রাখার দাবি জানিয়েছে ব্রিটেনের বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, কনজারভেটিভ পার্টির পক্ষ থেকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের কাছে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, রূপপুর প্রকল্পটি রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি রোসাটমের অধীনে নির্মিত হচ্ছে। টিউলিপ সিদ্দিকের দায়িত্বে থাকা অফিস ফর ফিন্যান্সিয়াল স্যাংকশনস ইমপ্লিমেন্টেশন রোসাটমের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর ৪৫টি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার দায়িত্বে থাকাকালীন টিউলিপের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে।
কনজারভেটিভ পার্টির স্বরাষ্ট্রবিষয়ক মুখপাত্র ম্যাট ভিকার্স দাবি করেন, টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত তাকে দুর্নীতিবিরোধী যেকোনো নীতিনির্ধারণী কাজ থেকে বিরত রাখা উচিত। তিনি বলেন, টিউলিপের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন থাকা সত্ত্বেও তাকে দায়িত্বে রাখা লেবার পার্টির জন্য লজ্জার বিষয়।
এদিকে, বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) টিউলিপ সিদ্দিক, তার মা শেখ রেহানা, এবং তার খালা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। দুদকের দাবি, রূপপুর প্রকল্প থেকে ভুয়া কোম্পানি ও বিদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এই অর্থ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষ দল প্রমাণ সংগ্রহ করছে এবং অভিযুক্তদের জবাবদিহির জন্য শিগগিরই চিঠি পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। দুদকের কর্মকর্তারা জানান, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হবে এবং টিউলিপ সিদ্দিকসহ সংশ্লিষ্টদের সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।
এদিকে, ব্রিটিশ ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি সম্প্রতি দুর্নীতিবিরোধী তদন্তে সহায়তা করতে বাংলাদেশ সফর করেছে। কনজারভেটিভ পার্টির এক এমপি পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডার্ডস কমিশনারকে টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের অনুরোধ করেছেন। তবে লেবার পার্টির পক্ষ থেকে অভিযোগগুলোকে অমূলক হিসেবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
লেবার পার্টির নেতারা জানান, টিউলিপ সিদ্দিক অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন এবং এখন পর্যন্ত কোনো কর্তৃপক্ষ তার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তবু কনজারভেটিভ পার্টি এবং ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের চাপের কারণে বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
দুদকের মহাপরিচালক আখতার হোসেন বলেছেন, এই চিঠি অভিযুক্তদের নিজেদের পক্ষে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেবে। তদন্তে সহযোগিতা না করলে, টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ এবং ব্রিটিশ সরকারের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি ক্ষুণ্ন করবেন।
এ বিষয়ে লেবার পার্টি টিউলিপের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে। তবে বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টি চাপ অব্যাহত রেখেছে। টিউলিপের ওপর আনা অভিযোগ লেবার পার্টির জন্য একটি বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
repoter