
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
উত্তরায় যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনার আহতদের পাশে দাঁড়াল বিএনপি, জানাল গভীর সমবেদনা
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ক্যান্টিন ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফটি-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার পর আহতদের দেখতে সোমবার (২১ জুলাই) বিকেলে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে যান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সরাসরি নির্দেশে এই সফর অনুষ্ঠিত হয় বলে নিশ্চিত করেছেন দলের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবীর খান।
বার্ন ইনস্টিটিউটে গিয়ে মির্জা ফখরুল চিকিৎসাধীন আহতদের খোঁজখবর নেন এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি দগ্ধ শিশু ও কিশোর রোগীদের চিকিৎসার অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজ নেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে তিনি আহতদের পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন এবং বিএনপির পক্ষ থেকে গভীর সহানুভূতি ও সংহতি প্রকাশ করেন।
এ দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপটে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, সোমবার দুপুর ১টা ৬ মিনিটে কুর্মিটোলায় অবস্থিত বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একে খন্দকার ঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের কিছু সময়ের মধ্যেই এফটি-৭ বিজিআই মডেলের যুদ্ধবিমানটি যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয়। পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম দুর্ঘটনা মোকাবিলায় বিমানটিকে জনবহুল এলাকা থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করলেও, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি দোতলা ভবনের ওপর আছড়ে পড়ে।
বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বৈমানিকসহ ১৯ জন নিহত হন এবং আহত হয়েছেন আরও ১৬৪ জন। আহতদের অধিকাংশই ওই সময় বিদ্যালয় ক্যান্টিনে অবস্থানরত শিক্ষার্থী। তাদের অনেকেই বর্তমানে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এবং সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা পুরো জাতিকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। শিশুদের হতাহতের বিষয়টি বিশেষভাবে হৃদয়বিদারক। দুর্ঘটনার পরপরই সরকারের পক্ষ থেকে উদ্ধার ও চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করা হলেও স্বজনহারা পরিবারগুলোর দুঃখ-যন্ত্রণা কোনোভাবেই পূরণযোগ্য নয়।
এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির মহাসচিবের হাসপাতাল পরিদর্শন রাজনৈতিক নয়, বরং একটি মানবিক দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে। মির্জা ফখরুল বলেন, “এটা আমাদের জাতীয় ট্র্যাজেডি। যারা প্রাণ হারিয়েছেন এবং যারা এখনো মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন, তারা আমাদেরই ভাই-বোন, সন্তান। রাজনীতি থাকুক তার জায়গায়, কিন্তু এই মুহূর্তে আমাদের কর্তব্য একে অপরের পাশে দাঁড়ানো।”
দলের পক্ষ থেকে দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়েছে এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করা হয়েছে। পাশাপাশি, বিএনপি নেতারা প্রয়োজন হলে চিকিৎসা সহায়তা, ওষুধ এবং রক্তদানের জন্য দলের স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনগুলোকেও প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর। যান্ত্রিক ত্রুটির প্রাথমিক কারণ শনাক্ত করতে বিমানবাহিনী একটি বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। পাশাপাশি, নিহতদের মরদেহ শনাক্ত করে দ্রুত পরিবারের কাছে হস্তান্তর এবং আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
মির্জা ফখরুলের এই হাসপাতালে উপস্থিতি সামাজিক মাধ্যমেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এমন জাতীয় দুর্যোগে দল-মত নির্বিশেষে সব পক্ষের সহানুভূতিশীল উপস্থিতি প্রয়োজন, যা মানুষকে মানসিকভাবে সাহস ও সান্ত্বনা দিতে পারে। এই ধরনের উদ্যোগগুলো রাজনীতির বাইরে গিয়ে মানবিকতার জায়গা থেকে দেখা জরুরি বলে মত দিয়েছেন অনেকেই।
repoter