ঢাকা,  শুক্রবার
১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ , ০২:২৪ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ: ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল * গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, দেশে–বিদেশে উদ্বেগ * ঢাকা–দিল্লি সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা, আজ চালু থাকছে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র * ৬৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ জব্দ, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে গতি আনছে সরকার * যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ ফিরিয়ে আনছেন ট্রাম্প, সমালোচনার কেন্দ্রে ভেনেজুয়েলা অভিযান * পাবনার বেড়ায় স্পিডবোটে এসে বাজারে ডাকাতি, ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত * যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভেনেজুয়েলা অভিযান: মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে * ট্রাম্পের ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা: ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে নতুন জটিলতা * গুম ও মানবতাবিরোধী অভিযোগে ১৩ সেনা কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে * বিএনপির ৪০টির বেশি আসনে মনোনয়নসংক্রান্ত অসন্তোষ, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ব্যস্ত সমাধান খুঁজতে

সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নির্বাচন কমিশন: সিইসি নাসির উদ্দীন

repoter

প্রকাশিত: ০৬:৪৬:৪১অপরাহ্ন , ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আপডেট: ০৬:৪৬:৪১অপরাহ্ন , ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

-সংগৃহীত ছবি

ছবি: -সংগৃহীত ছবি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীন ঘোষণা দিয়েছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে নির্বাচন কমিশন সর্বশক্তি নিয়োগ করবে। তিনি বলেছেন, নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করছে এবং কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রভাবের বাইরে থেকে নিজেদের মতো করেই প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।

সোমবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্র্যাসি অ্যান জ্যাকবসনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সিইসি এসব কথা বলেন। তিনি উল্লেখ করেন, মার্কিন কূটনীতিক নির্বাচনী প্রস্তুতির অগ্রগতি বোঝার জন্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

সিইসি বলেন, “এটা এক ধরনের বিশেষ পরিস্থিতি, বিশেষ ধরনের সরকার। প্রধান উপদেষ্টা আমাদের ফেব্রুয়ারি মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি রমজানের আগে নির্বাচনের কথা উল্লেখ করেছিলেন। আমরা সেই নির্দেশনা অনুযায়ী প্রস্তুতি শুরু করি। পরে প্রস্তুতি আরও জোরদার করা হয়েছে, তবে আসলে নির্বাচনের প্রক্রিয়া অনেক আগে থেকেই চালু রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকবে। তিনি জানান, গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে আলোচনায় তারা কমিশনকে আশ্বস্ত করেছে যে কমিশন যেভাবে নির্দেশ দেবে সেভাবেই সহযোগিতা করা হবে। সিইসি স্পষ্ট করে বলেন, “নির্বাচনের সময় মাঠের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা যেসব পরিকল্পনা নিয়েছি, তা বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্পূর্ণ সহায়তা করবে।”

সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণের শুনানিতে বিএনপি ও এনসিপি নেতাদের মধ্যে হাতাহাতির সাম্প্রতিক ঘটনার প্রসঙ্গেও সিইসি বক্তব্য দেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এ ঘটনায় ইতোমধ্যেই নির্বাচন কমিশন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। পুলিশের কাছে তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে যাকে দোষী সাব্যস্ত করবে তার বিরুদ্ধেই আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “কোনো বিশৃঙ্খলা বা অরাজকতা সহ্য করা হবে না। কমিশন সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করবে।”

এদিকে নির্বাচন কমিশনের ভেতরের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, কমিশন ইতোমধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ এবং ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে। যদিও ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত রয়েছে, তবু কমিশন নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও দ্রুত ফলাফল প্রদানে এটি কার্যকর মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করছে।

সিইসি নাসির উদ্দীন তার বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতার বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “আমরা কোনো ধরনের বাহ্যিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করব না। আমাদের লক্ষ্য একটাই—একটি অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন।” তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক মহল বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী হোক তা প্রত্যাশা করছে। এ কারণে কমিশনও চায় নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন বা বিতর্ক যেন না থাকে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে বর্তমানে নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের বিতর্ক ও আলোচনার মধ্যেই সিইসির এই আশ্বাস এসেছে। অনেক রাজনৈতিক দল নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছে, আবার কেউ কেউ শঙ্কাও প্রকাশ করেছে। বিশেষত বিরোধী দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমকে ঘিরে সমালোচনামূলক বক্তব্য শোনা গেছে। তবে সিইসির বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে যে, কমিশন কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্বে বিশ্বাসী নয় এবং সব দলকে সমান সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচন কমিশনের ওপর এখন সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো আস্থা পুনর্গঠন করা। গত কয়েকটি নির্বাচনে কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল, তাই এবার সিইসি নিজে থেকেই প্রকাশ্যে নিরপেক্ষতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলোকে বোঝাতে পারলে এবং জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারলে নির্বাচন কমিশন একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দিতে সক্ষম হবে।

আন্তর্জাতিক মহলও আসন্ন নির্বাচনের দিকে দৃষ্টি রাখছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ বারবার বলেছে, তারা চায় বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। এরই অংশ হিসেবে মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্র্যাসি অ্যান জ্যাকবসনের এই বৈঠককে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বৈঠকের বিস্তারিত প্রকাশ করা না হলেও ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের পরিবেশ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

দিনের শেষে সিইসির বক্তব্য এক ধরনের আশ্বস্ত বার্তা দিয়েছে। তিনি বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে সবাই সমান, এবং কমিশন নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে। তার ভাষায়, “আমরা সর্বশক্তি নিয়োগ করব। আমাদের চেষ্টা থাকবে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে একটি সুন্দর নির্বাচন আয়োজন করা।”

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করছে এই নির্বাচনের ওপর। রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ, জনগণের আস্থা, এবং কমিশনের নিরপেক্ষতা—সবকিছু মিলিয়েই এই নির্বাচন একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। সিইসি নাসির উদ্দীনের কথায়, “আমরা চাই নির্বাচন হোক জনগণের উৎসব, যেখানে প্রত্যেকে তাদের মত প্রকাশের সুযোগ পাবে।”

repoter