ছবি: -সংগৃহীত ছবি
শরীয়তপুরে রোগী বহনকারী একটি অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখায় সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত শিশুটির পরিবারের দাবি, স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স চালক সিন্ডিকেটের বাধার কারণেই এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
রোগীর স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ডামুড্যা উপজেলার কনেশ্বর এলাকার নূর হোসেন সরদারের স্ত্রী রুমা বেগম বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রসব বেদনা অনুভব করলে তাকে জেলার নিউ মেট্রো ক্লিনিক নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে একটি ছেলে সন্তান জন্ম নিলেও জন্মের পর থেকেই নবজাতক ঠান্ডাজনিত শ্বাসকষ্টে ভুগছিল।
শিশুর শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে ক্লিনিকের চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। এ সময় পরিবারের সদস্যরা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে চাইলে স্থানীয় সিন্ডিকেটভুক্ত চালকরা ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় শিশুটির পরিবার বিকল্পভাবে পাঁচ হাজার টাকায় অন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিতে গেলে বাধার মুখে পড়ে।
অভিযোগ অনুযায়ী, স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স চালক সবুজ দেওয়ান ও আবু তাহের দেওয়ান শিশুবাহী ওই অ্যাম্বুলেন্সটিকে আটকে দেন এবং ঢাকায় যেতে না দেওয়ার জন্য জোরপূর্বক তর্কবিতর্ক শুরু করেন। তারা দাবি করেন, তাদের অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া অন্য কোনো গাড়িতে রোগী পরিবহন করা যাবে না। একপর্যায়ে তারা অ্যাম্বুলেন্স চালকের কাছ থেকে জোর করে চাবি নিয়ে নেন এবং তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এ সময় রোগীর স্বজনরা বাধা দিলে তারাও হামলার শিকার হন।
প্রায় ৪০ মিনিট এভাবে আটকে থাকার পর অ্যাম্বুলেন্সেই শিশুটি মারা যায়। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, বিলম্ব ও অক্সিজেন সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় শিশুটির জীবন রক্ষা সম্ভব হয়নি।
শিশুর নানি শেফালী বেগম জানান, তারা গরিব হওয়ায় কম খরচের অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেছিলেন। কিন্তু সিন্ডিকেটের কারণে শিশুটি ঢাকায় পৌঁছাতে পারেনি। তার অভিযোগ, জোরাজুরির সময় শিশুর অক্সিজেন খুলে গিয়েছিল। তিনি অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি দাবি করেন।
ঢাকার অ্যাম্বুলেন্স চালক মোশারফ মিয়া বলেন, তিনি হাসপাতালের পাশে গাড়ি পার্ক করে ছিলেন এবং পরিবারের অনুরোধে পাঁচ হাজার টাকায় ঢাকার জন্য প্রস্তুত হন। কিন্তু কয়েকজন স্থানীয় চালক এসে তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে চাবি নিয়ে নেয়। তার অনুরোধ সত্ত্বেও তারা গাড়ি ছাড়েনি, যার ফলে নবজাতকের মৃত্যু হয়।
ঘটনার পর অভিযুক্ত দুই চালক ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন জানান, বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে এবং ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে এবং সিন্ডিকেটের কার্যক্রম খতিয়ে দেখা হবে।
repoter




