ছবি: ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের সঙ্গে বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও গণতান্ত্রিক রূপান্তর নিয়ে আলোচনা
বাংলাদেশের মাটিতে সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান নেই বলে দৃঢ়ভাবে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, দেশের অভ্যন্তরে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না। সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইকে জাতীয় অগ্রাধিকারের শীর্ষে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’।
সোমবার (২৮ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জেকবসনের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। দুই দেশের মধ্যকার বিভিন্ন পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই বৈঠক, যার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল দ্বিপাক্ষিক শুল্ক আলোচনা ও সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশের মাটিতে সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান নেই। যারা এই দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায়, তাদের প্রতিহত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী এবং প্রশাসন এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে। দেশের জনগণও এখন আর সন্ত্রাসবাদকে মেনে নেয় না।”
বৈঠকে প্রায় ৪০ মিনিট ধরে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আলোচনা হয়। বিশেষ করে চলমান শুল্ক নীতি এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। উভয় পক্ষই পারস্পরিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও গভীর করার আগ্রহ প্রকাশ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি ট্রেসি জেকবসন বাংলাদেশের চলমান সংস্কার ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরের অগ্রগতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পথে যাত্রা আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আপনাদের এই প্রক্রিয়ায় পূর্ণ সমর্থন অব্যাহত রাখব। আগামী বছরের শুরুতে সম্ভাব্য জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমরা আশাবাদী। এই নির্বাচনের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে উঠবে।”
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐকমত্য গঠনে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েও আলোচনা করেন। তিনি জানান, ‘ন্যাশনাল কনসেনসাস-বিল্ডিং কমিশন’ ইতোমধ্যেই কার্যকরভাবে কাজ শুরু করেছে। কমিশনের নেতৃত্বে থাকা অধ্যাপক আলী রিয়াজের ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, এই কমিশনের সদস্যরা নিরলসভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও নাগরিক অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি তৈরি করা, যা দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে।
উভয় পক্ষই ভবিষ্যতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। বিশেষ করে নিরাপত্তা, অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা—এই তিনটি ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা বৃদ্ধি করার বিষয়ে তারা একমত পোষণ করেন।
বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টা আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, “বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সমঝোতার ভিত্তিতে আরও গভীর ও ফলপ্রসূ হবে।” তিনি বলেন, “আমরা চাই একটি সহনশীল, স্থিতিশীল এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে, যেখানে মানুষের অধিকার, নিরাপত্তা এবং সম্ভাবনার পূর্ণ বিকাশ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।”
repoter




