ছবি: ছবি: সংগৃহীত
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের উদ্যোগে রাজধানীর শাহবাগে অনুষ্ঠিত সমাবেশ শেষে এক ব্যতিক্রমী চিত্র দেখা যায়। সমাবেশ শেষে সংগঠনের নেতাকর্মীরা নিজেরাই পুরো সমাবেশস্থল পরিষ্কার করতে উদ্যোগ নেন। সড়কে ছড়িয়ে থাকা ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, পানির বোতল ও অন্যান্য বর্জ্য তারা সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলেন।
রবিবার (৩ আগস্ট) দুপুর ৩টা ১৫ মিনিটে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি তাঁর বক্তব্যে গণতন্ত্র রক্ষায় শহীদদের ত্যাগ ও ছাত্রদের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন।
সমাবেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে প্রাণ দেওয়া শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিপুল সংখ্যক ছাত্রদল নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের জ্যেষ্ঠ নেতা ও সাবেক ছাত্রনেতারাও।
বক্তব্যপর্ব ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পরেই ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা দলবদ্ধভাবে সড়কে ছড়িয়ে থাকা আবর্জনা পরিষ্কার করতে শুরু করেন। অনেকেই স্লোগান না দিয়ে হাতে ব্যাগ নিয়ে আবর্জনা সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী এই পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলে, যেখানে সমাবেশস্থল ও আশপাশের এলাকা আবর্জনামুক্ত করা হয়।
শাহবাগ এলাকায় অবস্থানরত সাধারণ মানুষ ও পথচারীরা ছাত্রদলের এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখেন। তাদের অনেকে এমন সচেতনতা ও দায়িত্ববোধের প্রশংসা করেন।
পিজি হাসপাতালের সামনে পরিচ্ছন্নতার কাজ করছিলেন শাজাহানপুর থানা ছাত্রদলের একজন কর্মী সবুজ। তিনি বলেন, “গণতন্ত্রের জন্য যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের প্রতি সম্মান জানানো আমাদের কর্তব্য। আমরা যেমন দেশের জন্য আন্দোলন করি, তেমনই দেশকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাও আমাদের দায়িত্ব। এ উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা একটি পরিচ্ছন্ন ও দায়িত্বশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতির বার্তা দিতে চাই।”
ছাত্রদলের এই ব্যতিক্রমী আচরণ রাজনৈতিক সমাবেশগুলোর প্রচলিত চিত্র থেকে অনেকটাই ভিন্ন। সাধারণত বড় সমাবেশগুলো শেষে সড়ক ও আশপাশের এলাকা নোংরা হয়ে পড়ে। কিন্তু ছাত্রদলের পক্ষ থেকে সমাবেশস্থল পরিষ্কারের এই উদ্যোগ পরিবেশ সচেতনতা ও সামাজিক দায়িত্ব পালনের একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে গণ্য হচ্ছে।
এই উদ্যোগ শুধুই প্রতীকী নয়, বরং তা রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়নের এক বাস্তব চিত্র বলেও অনেকে মনে করছেন। ছাত্ররাজনীতিতে শৃঙ্খলা ও মানবিকতা প্রতিষ্ঠার এক প্রয়াস হিসেবেও দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন উদ্যোগ যদি নিয়মিতভাবে অনুসরণ করা হয়, তবে দেশের রাজনীতিতে একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে।
শাহবাগে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশ ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে ছাত্রদল শুধু শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়নি, বরং একটি ভিন্নধর্মী সামাজিক বার্তাও দিয়েছে—সচেতনতা, দায়িত্ববোধ ও রাজনৈতিক সৌন্দর্যের মিলন ঘটিয়ে দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গড়ে তোলার।
repoter

