
ছবি: -সংগৃহীত ছবি
বাংলা সংগীতের জীবন্ত কিংবদন্তি, লালনগীতি শিল্পী ফরিদা পারভীনকে সর্বস্তরের মানুষ শেষ শ্রদ্ধা জানালেন। রবিবার দুপুরে তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হলে সেখানে ভিড় জমে শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বসহ সাধারণ মানুষের। সবাই ফুলে ফুলে ভরে দেন লালনের এই উত্তরসূরির কফিন।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর মরদেহ নেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে। সেখানে বাদ যোহর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় শিল্পীর জন্মস্থান কুষ্টিয়ায়। সেখানে পৌর কবরস্থানে তার মা-বাবার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে তাকে।
শিল্পীর ছেলে ইমাম নাহিল সুমন সাংবাদিকদের জানান, ঢাকায় জানাজা শেষে পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কুষ্টিয়ার মাটিতেই মায়ের দাফন সম্পন্ন হবে। তিনি বলেন, “আমার মা আজ আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। তার ইচ্ছা ছিল কুষ্টিয়ার মাটিতে বাবা-মায়ের পাশে শায়িত হওয়ার। আমরা সেটিই পালন করছি।”
ফরিদা পারভীন দীর্ঘদিন ধরেই নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। কিডনি জটিলতা, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যার কারণে তাকে বারবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। চলতি বছরেই অন্তত তিনবার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। সর্বশেষ ২ সেপ্টেম্বর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালে নেওয়ার পরই তার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে। আইসিইউতে নেওয়ার পর তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। গত বুধবার থেকে তার কিডনি ও মস্তিষ্ক কার্যক্ষমতা হারাতে শুরু করে। ধীরে ধীরে শরীরের ভেতরে রক্ত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অকেজো হয়ে যায়। চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও তাকে আর সুস্থ করে তুলতে পারেননি।
রবিবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে লাইফ সাপোর্ট সরিয়ে নেওয়া হলে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। সংগীতপ্রেমীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে শ্রদ্ধা জানাতে থাকেন। লালনের গানের ধারক-বাহক হিসেবে পরিচিত ফরিদা পারভীনের প্রস্থানকে সংগীতাঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে দেখছেন শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীরা।
সংগীত জীবনে ফরিদা পারভীন নিজেকে কেবল লালনসংগীতের শিল্পী হিসেবে সীমাবদ্ধ রাখেননি। শুদ্ধ সংগীতের প্রতি তার দায়বদ্ধতা, সুরের ভেতরে আধ্যাত্মিকতার ছোঁয়া এবং সুমধুর কণ্ঠ তাকে করেছে অনন্য। দেশ-বিদেশে অসংখ্যবার লালনের গান গেয়ে বাংলাদেশের সংগীতকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করিয়েছেন তিনি। তার কণ্ঠে ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘তোরা সবাই কর হুশিয়ার’, ‘নারে রে নারে রে’ প্রভৃতি গান শ্রোতাদের হৃদয়ে গভীর দাগ কেটেছে।
তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শোক প্রকাশ করেছে। তারা বলেছেন, বাংলা সংগীত, বিশেষ করে লালনগীতি চর্চা ও প্রচারে ফরিদা পারভীনের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আজীবন নিবেদিতপ্রাণ এই শিল্পীর প্রয়াণে দেশে শূন্যতার সৃষ্টি হলো বলে মনে করছেন সংস্কৃতিমনা মানুষ। তবে তার কণ্ঠে অমর হয়ে থাকা গানগুলো তাকে অমর করে রাখবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম।
repoter