
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
ভারতের মাটিতে বসে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যক্রম বা বিবৃতি প্রকাশে কোনো সহায়তা দেয়নি ভারত সরকার। দেশটির পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি এ কথা জানান। সম্প্রতি ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সামনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ও শেখ হাসিনার ভূমিকা নিয়ে তিনি তার বক্তব্য তুলে ধরেন।
বিক্রম মিশ্রি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল বা সরকারের সঙ্গে সীমাবদ্ধ নয়। বরং এই সম্পর্ক বাংলাদেশের জনগণের প্রতি ভারতের শ্রদ্ধা ও মনোযোগের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি জানান, ভারতের ভূমিতে বসে তিনি তার বক্তব্য প্রচারে ব্যক্তিগত যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছেন, তবে তাকে কোনো প্ল্যাটফর্ম বা সুযোগ দেয়নি ভারত সরকার।
তিনি বলেন, তৃতীয় দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এড়ানো ভারতের দীর্ঘদিনের নীতির অংশ। ভারত বরাবরই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করে এসেছে।
সাম্প্রতিক ঢাকা সফর সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে বিক্রম মিশ্রি জানান, সফরের সময় তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি ভারতের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তা দেন যে দুই দেশের সম্পর্ক কোনো নির্দিষ্ট দলের সঙ্গে নয়, বরং তা জনগণকেন্দ্রিক।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য ও যোগাযোগের অংশীদার। দুই দেশের মধ্যে রেল, বাস, ও নৌপথে সংযোগ উন্নত করা হয়েছে। তবে যাত্রীবাহী রেল সেবা বর্তমানে স্থগিত রয়েছে।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে আলোচনায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতার বিষয়টি উঠে আসে। এ বিষয়ে বিক্রম মিশ্রি জানান, ভারত এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন হলেও বাংলাদেশ সরকার অনেক দোষী ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান উদ্বেগ ও মতপার্থক্যের বিষয়েও দুই পক্ষ আলোচনা করেছে।
ভারত বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছে, যেসব ব্যক্তি সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত বা ভারত বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন, তাদের মুক্তি দেওয়া নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত মিথ্যা তথ্যের বিষয়ে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের সঙ্গে কোনো বিদ্যমান চুক্তি পর্যালোচনার বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি বলে নিশ্চিত করেন বিক্রম মিশ্রি।
ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আগস্ট মাসে শেখ হাসিনার পতন এবং ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে কিছুটা টানাপড়েন চলছে। এমন পরিস্থিতিতে দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতি নিশ্চিত করতে চলতি সপ্তাহে ঢাকা সফর করেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব।
সফরের সময় তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, এবং পররাষ্ট্রসচিব জসীম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। সফরের পর দিল্লিতে ফিরে ভারতের সংসদ সদস্যদের ব্রিফিংকালে তিনি এসব বিষয় তুলে ধরেন।
বিক্রম মিশ্রি জানান, সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বিভিন্ন ইস্যুতে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই সফর দুই দেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে ভূমিকা রাখবে।
repoter