ছবি: -সংগৃহীত ছবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামীকাল মঙ্গলবার। দীর্ঘ প্রায় ১১ মাসের প্রস্তুতির পর শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে এই ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার সূচনা হতে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান সোমবার এক ভিডিও বার্তায় শিক্ষার্থীদের নির্ভয়ে ভোট দিতে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
উপাচার্য বলেন, সারা দেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই এ নির্বাচনকে শুভকামনা জানাচ্ছেন। একটি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার প্রচেষ্টায় শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানান তিনি। তার ভাষায়, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে গণতন্ত্রের বিকাশে অবদান রেখে আসছে। এবার তোমাদের দায়িত্ব, এই নির্বাচনের মাধ্যমে সেই প্রক্রিয়াকে আরও এগিয়ে নেওয়া।”
ভিডিও বার্তার শুরুতে উপাচার্য ডাকসু পুনঃচালুর প্রচেষ্টার ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, প্রায় এক বছরের প্রস্তুতির পর অবশেষে মাহেন্দ্রক্ষণ এসেছে। আগামীকাল সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। এ নির্বাচনে থাকবে ৮১০টি বুথ এবং প্রায় ৪০ হাজার ভোটার তাদের মতামত প্রকাশ করবেন। প্রথমবারের মতো হলের বাইরে ৮টি কেন্দ্রে ভোটের আয়োজন করা হয়েছে, যা ঢাবির ইতিহাসে নতুন দৃষ্টান্ত।
নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান উপাচার্য। তিনি বলেন, “আমাদের ছাত্রীদের জন্য আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। তারা নির্ভয়ে ভোট দিতে আসতে পারবেন। সারা দেশ তোমাদের প্রতি আস্থা রেখেছে, সেই আস্থার প্রতিদান তোমরাই দেবে।”
স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রশাসন বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। উপাচার্য জানান, সিসিটিভি ক্যামেরা, তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং প্রশিক্ষিত পোলিং কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে। ভোট গণনার সময় এলইডি স্ক্রিনের মাধ্যমে সব কিছু উন্মুক্ত রাখা হবে যাতে সবাই সরাসরি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও সার্বক্ষণিকভাবে এ প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করবেন।
তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচন কর্মকর্তারা বিভিন্ন মতাদর্শের হলেও তাদের সবার সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তাই নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রক্রিয়া নিশ্চিত হবে বলে তিনি আশাবাদী। উপাচার্যের মতে, এবারের নির্বাচন শুধুমাত্র একটি প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া নয়, বরং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
প্রার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য বলেন, “এটি একটি প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়া। কেউ বিজয়ী হবেন, কেউ নাও হতে পারেন। কিন্তু জয়-পরাজয়ের উর্ধ্বে গিয়ে এই নির্বাচনের সাফল্য হলো তোমাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। বিজয়ী এবং বিজিত উভয়েরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে সক্রিয় করার ক্ষেত্রে।” তিনি যোগ করেন, এতদিনের নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সবাই এই পর্যায়ে পৌঁছেছেন। এখন দায়িত্ব হলো স্বচ্ছন্দে এই পথচলা সম্পন্ন করা।
এবারের ডাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ভোটার ১৮ হাজার ৯৫৯ এবং ছাত্র ভোটার ২০ হাজার ৯১৫ জন। ২৮টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ৪৭১ জন প্রার্থী, যার মধ্যে ৪০৯ জন পুরুষ এবং ৬২ জন নারী।
উপাচার্য এ নির্বাচনকে ঐতিহাসিক হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “বহু বছর পর আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আমরা যে উদ্যোগগুলো নিয়েছি, তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে নজিরবিহীন।”
আগামীকাল যখন সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হবে, তখন শুধুমাত্র ঢাবির শিক্ষার্থীরাই নয়, পুরো দেশ চোখ রাখবে এই নির্বাচনের দিকে। গণতান্ত্রিক চর্চাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার এই উদ্যোগ সফল হবে কিনা, তার উত্তর মিলবে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং দায়িত্বশীল আচরণের মধ্য দিয়েই।
repoter




