
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
কক্সবাজারে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হওয়ার আগে স্ত্রী ও সন্তানদের খোঁজ নিয়েছিলেন খুলনার সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি গোলাম রাব্বানী টিপু। তার স্ত্রী সাবিহা আক্তার জানান, মাগরিবের নামাজের পর টিপু তাকে ফোন দিয়ে জানতে চান, নামাজ পড়া হয়েছে কিনা এবং সন্তানরা কোথায়। সেদিনই রাত সাড়ে ৮টার দিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন হোটেল সীগালের সামনে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
সাবিহা আক্তার জানান, তার স্বামীকে হত্যার পেছনে মূল পরিকল্পনাকারী গাজী কামরুল। একসময়ের শীর্ষ চরমপন্থি এই নেতা বিভিন্ন সময় তার স্বামীকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তার স্বামীকে কক্সবাজারে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
শুক্রবার সকালে খুলনা মহানগরীর দেয়ানা এলাকার বাড়িতে গেলে পরিবারের শোকের দৃশ্য দেখা যায়। বাড়ির সামনে মানুষের ভিড়, আর ভেতরে পরিবারের সদস্যদের আর্তনাদে শোকের ছায়া। নিহত টিপুর বৃদ্ধ পিতা গোলাম আকবর ছেলের মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ। সদ্য পিতৃহারা ছেলে তাসিন রব্বানী রাহাতও যেন শোকবিহ্বল। খুলনা সরকারি ল্যাবরেটরি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র রাহাত আর কোনো কথা বলতে পারছে না।
পরিবারের সদস্যরা জানান, টিপু কক্সবাজারে মাছ ও লবণের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার কক্সবাজারে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। বর্তমানে জমিজমা ব্যবসা করলেও পূর্ব শত্রুতা ও জমি সংক্রান্ত বিরোধে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে পরিবারের ধারণা। তার বড় ভাই গোলাম রসুল বাদশা বলেন, দৌলতপুর ও পাবলাকেন্দ্রিক শত্রুরাই পরিকল্পনা করে তাকে হত্যা করেছে।
স্থানীয়রা জানান, গোলাম রাব্বানী টিপু এলাকার একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। তিনি মানুষের সালিশ-দরবার করতেন। তবে তার জনপ্রিয়তা অনেকের কাছে ছিল অসহনীয়। শত্রুতার কারণে সব সময় দলবল ও অস্ত্রসহ চলাফেরা করতেন। এলাকায় তার অনেক শত্রু ছিল।
তদন্তে জানা যায়, মঙ্গলবার ঢাকায় থেকে কেসিসির সদ্য অপসারিত আরেক কাউন্সিলর শেখ হাসান ইফতেখার চালুর সঙ্গে কক্সবাজার যান টিপু। বুধবার সকালে তারা কক্সবাজারে পৌঁছান এবং একটি হোটেলে অবস্থান করেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত হোটেলেই ছিলেন তারা। রাত ৮টা ২০ মিনিটে হোটেল সীগালের সামনে দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে।
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর আতাহার আলী জানান, টিপুর বিরুদ্ধে দুটি হত্যাকাণ্ডসহ কয়েকটি মামলা ছিল। তবে বর্তমানে তার নামে কোনো মামলা নেই। এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চলছে। টিপুর লাশ এখনো কক্সবাজারে রয়েছে এবং বাড়িতে পৌঁছায়নি।
নিহত টিপুর বৃদ্ধ পিতা গোলাম আকবর বলেন, আমার ছেলে খুব ভালো মানুষ ছিল। সে মানুষের উপকার করত। কারও কোনো ক্ষতি করেনি। তাকে কৌশলে কক্সবাজারে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমি এই শোক কীভাবে সহ্য করব, তা জানি না।
repoter