ছবি: ছবি: সংগৃহীত
একনেক সভায় পানি, স্যানিটেশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রকল্পসহ ৮,৯৭৪ কোটি টাকার মোট ১৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন
বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন এবং কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুবিধা নিশ্চিত করতে ৬৫২ কোটি ৫৫ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
গতকাল অনুষ্ঠিত চলতি অর্থবছরের শেষ একনেক সভায় আরও ১৬টি প্রকল্পসহ এ প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। সভায় অনুমোদিত মোট প্রকল্প ব্যয়ের পরিমাণ ৮ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা।
‘বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং স্থানীয় জনসমাজের সমন্বিত সেবা ও জীবন-জীবিকা উন্নয়ন’ শীর্ষক এ প্রকল্পটি কক্সবাজার ও নোয়াখালীর ১১টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হবে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এ প্রকল্পে ২৩২ কোটি ২৮ লাখ টাকা ঋণ, ৩০৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা অনুদান এবং বাংলাদেশ সরকার (জিওবি) ১১২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা দেবে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্প কার্যক্রম শুরু হবে ২০২৫ সালের জুলাই মাস থেকে এবং শেষ হবে ২০২৮ সালের জুনে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের উখিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত পানি সঞ্চালন লাইন, বিতরণ নেটওয়ার্ক এবং গৃহসংযোগ স্থাপনে ব্যয় হবে ১২৫ কোটি টাকা। এছাড়া জেলার নয়টি উপজেলায় ২০টি মিনি পাইপ পানি সরবরাহ সিস্টেম নির্মাণে ১২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
প্রকল্পে আরও রয়েছে পানি শোধনাগার নির্মাণ, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সেকেন্ডারি লাইন স্থাপন, বিদ্যমান পানির স্কিম ও স্যানিটেশন সুবিধা পরিচালনা, ভাসানচরে স্লাজ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন এবং সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সংস্কার ও পুনর্বাসন।
তবে প্রকল্প বাস্তবায়নের এলাকা নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছে, বিশেষ করে কক্সবাজারের বাকি সাত উপজেলা ও নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও হাতিয়া উপজেলায় কাজ করার যৌক্তিকতা নিয়ে। এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা) এহতেশামুল রাসেল খান জানান, প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য হচ্ছে উখিয়া, টেকনাফ ও ভাসানচরের রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগণের সেবা নিশ্চিত করা। তবে কক্সবাজারের অন্যান্য উপজেলাও রোহিঙ্গা সংকটে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেখানেও কিছু অংশে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করা হবে। সুবর্ণচর ও হাতিয়ায় মূলত সীমিত বাজেটে স্লাজ ব্যবস্থাপনার কাজ হবে।
প্রকল্পটি এডিবির অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে, তাই দাতাসংস্থার কিছু শর্ত মানতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এছাড়া সভায় আরও যেসব প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে:
-
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়: ২,৫৪৯ কোটি টাকার উপজেলা কমপ্লেক্স সম্প্রসারণ প্রকল্প
-
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়: সাত বিভাগীয় শহরে ২০০ শয্যার মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প (১,৪১৩ কোটি টাকা)
-
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়: চারটি মেরিন একাডেমিতে সিমুলেটর স্থাপন প্রকল্প (২৪৮ কোটি টাকা)
-
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়: নারীর জন্য ন্যায়বিচার ও মামলা ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প (১৮৪ কোটি টাকা)
-
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়: তৃতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপন প্রকল্প (১,২৮৬ কোটি টাকা)
-
শিল্প মন্ত্রণালয়: সার সংরক্ষণ ও বিতরণের জন্য ১৩টি নতুন বাফার গোডাউন নির্মাণ
-
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়:
-
কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন প্রকল্প (৬৬৬ কোটি টাকা)
-
নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিকার ও প্রতিরোধ প্রকল্প (৩০৯ কোটি টাকা)
-
-
শিক্ষা মন্ত্রণালয়: টিটিএফ প্রোগ্রাম (২,০০৯ কোটি টাকা)
-
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়: দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি স্থাপন প্রকল্প (১৫০ কোটি টাকা)
-
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়:
-
ডিজিটাল ডাটাবেজ ও বাজেট ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প (৪০ কোটি টাকা)
-
পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম উন্নয়ন (৩১৫ কোটি টাকা)
-
আধুনিক ক্রয় ব্যবস্থা বাস্তবায়ন প্রকল্প (৫৫২ কোটি টাকা)
-
-
অর্থ মন্ত্রণালয়:
-
পাবলিক অডিট ও অভ্যন্তরীণ রাজস্ব ব্যবস্থার ডিজিটাল রূপান্তর (৩১৫ কোটি টাকা)
-
পরিকল্পনা উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে একনেক সভায় এসব প্রকল্প অনুমোদিত হয়। সভায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
repoter




