ছবি: ছবি: সংগৃহীত
রাতে হঠাৎ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে রামপুরা, তেজগাঁও, মহাখালী, মালিবাগসহ গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল; মেরামতে কাজ করছে পিজিসিবি
রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে হঠাৎ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় রবিবার (২২ জুন) রাত পৌনে ১০টার পর। রামপুরা গ্রিড সাবস্টেশনে কারিগরি ত্রুটির কারণে পুরো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ঘটনায় রাজধানীর রামপুরা, মালিবাগ, মগবাজার, মহাখালী, তেজগাঁও, হাতিরঝিল এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকা অন্ধকারে ডুবে যায়।
রাত গভীর হতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম হয়। অনেকে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কেউ কেউ জানান, ঘরবাড়ি, অফিস এমনকি হাসপাতালেও বিদ্যুৎ না থাকায় চরম ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়েছে।
প্রাথমিক তথ্যে জানা যায়, রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে রামপুরা ২৩০/১৩২ কেভি গ্রিড সাবস্টেশনে হঠাৎ একটি কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়। ফলে রাজধানীর একাংশে তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এর প্রকৌশলীরা তাৎক্ষণিকভাবে মেরামতের কাজ শুরু করেন। রাত ১১টা পর্যন্ত তা চলমান ছিল বলে জানানো হয়।
এ বিষয়ে পিজিসিবির একটি অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, রামপুরা গ্রিড সাবস্টেশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে যান্ত্রিক ত্রুটি সৃষ্টি হওয়ায় পুরো গ্রিডের কার্যক্রম ব্যাহত হয়। ফলে সংযুক্ত এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। সংশ্লিষ্টরা জরুরি ভিত্তিতে বিকল্প উৎস থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালুর চেষ্টা করছেন।
বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, “রামপুরা গ্রিড সাবস্টেশনে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। পিজিসিবি জরুরি ভিত্তিতে বিকল্প উপায়ে সংযোগ চালুর চেষ্টা করছে। আমরা আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।”
এদিকে রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতাল ও বাণিজ্যিক স্থাপনাও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে বিঘ্নে পড়ে। বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা জানান, জেনারেটরের মাধ্যমে সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হলেও তা যথেষ্ট নয়। গরমের কারণে অসহ্য পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে অনেক বাসাবাড়িতে।
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে মোবাইল নেটওয়ার্কেও সমস্যা দেখা দেয় কিছু এলাকায়। বিশেষ করে মোবাইল টাওয়ারে ব্যাকআপ বিদ্যুৎ না থাকায় কল এবং ইন্টারনেট সংযোগে সমস্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পিজিসিবির একাধিক টেকনিক্যাল টিম ইতোমধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দ্রুততার সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং ভবিষ্যতে এমন বিপর্যয় এড়াতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা ও প্রযুক্তিগত সমন্বয়ের আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজধানীর এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হঠাৎ ত্রুটি দেখা দেওয়া অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তারা মনে করছেন, জাতীয় গ্রিড ও গ্রিড সাবস্টেশনগুলোর আধুনিকায়ন এবং পর্যাপ্ত ব্যাকআপ সিস্টেম থাকা জরুরি। তাছাড়া দ্রুত ও সমন্বিত প্রতিক্রিয়া ছাড়া এমন পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে আরও বড় পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
রাত ১২টা নাগাদ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ পুনরায় চালু হলেও অধিকাংশ এলাকায় তখনো বিভ্রাট চলমান ছিল। তবে পিজিসিবি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ধাপে ধাপে পুরো বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় সচল করা হবে এবং গ্রিড স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।
এই ঘটনার পর রাজধানীর বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বারবার গ্রিড বিপর্যয় হলে নাগরিক জীবনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। এজন্য ভবিষ্যতের জন্য টেকসই ও ঝুঁকিমুক্ত গ্রিড ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা জরুরি।
সার্বিক পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং পিজিসিবিকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং দায়ীদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন নাগরিকরা।
repoter




