
ছবি: শাহীনুর রহমান কাব্য ও সুজানা
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচল ৩০০ ফিট এলাকার লেকে কলেজছাত্রী সুজানার মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টার মাথায় তার বন্ধু কাব্যের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। আজ বুধবার সকালে পূর্বাচলের ২ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর ব্রিজ সংলগ্ন লেক থেকে কাব্যের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার একই স্থান থেকে সুজানার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ জানায়, নিহত শাহীনুর রহমান কাব্য (১৭) আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র এবং রাজধানীর কচুক্ষেত এলাকার বাসিন্দা হারুনুর রশীদের ছেলে। অপরদিকে, নিহত সুজানা (১৮) ভাষানটেক সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী এবং কচুক্ষেত এলাকার মৃত আব্বাস মিয়ার মেয়ে। তারা দুজন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হলেও কোচিং ক্লাসে একসঙ্গে পড়ার সুবাদে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার বিকেলে সুজানা বান্ধবীর বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে কাব্যের সঙ্গে পূর্বাচল এলাকায় মোটরসাইকেলে করে ঘুরতে আসে। কিন্তু ওই দিন রাতে সুজানা এবং কাব্য কেউই আর বাড়ি ফিরে যায়নি। তাদের পরিবারের সদস্যরা সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তাদের কোনো সন্ধান পায়নি।
মঙ্গলবার সকালে পূর্বাচলের ২ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর ব্রিজের লেক থেকে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় সুজানার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন বুধবার সকালে একই স্থান থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল মোটরসাইকেলসহ কাব্যের মরদেহ উদ্ধার করে।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, সুজানা ও কাব্য মোটরসাইকেলে করে পূর্বাচল এলাকায় ঘুরছিল। ধারণা করা হচ্ছে, রাতে অতিরিক্ত গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর সময় সেটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তারা লেকে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। তবে পুলিশ নিশ্চিত করেছে, মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে মরদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী ইসলাম বলেন, “ঘটনাটি আপাতদৃষ্টিতে একটি দুর্ঘটনা বলে মনে হচ্ছে। তারা সম্ভবত রাতের কোনো এক সময় মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে লেকে পড়ে যায়। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে নিশ্চিতভাবে বলা যাবে। এছাড়া, এ ঘটনার পেছনে কোনো রহস্য রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
নিহত কাব্যের বাবা হারুনুর রশীদ বলেন, “আমার ছেলে সোমবার বিকেলে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়। এরপর থেকে সে নিখোঁজ ছিল। আমরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেও তার সন্ধান পাইনি। গতকাল সকালে সুজানার মরদেহ উদ্ধারের খবর জানতে পারি। তখন জানতে পারি কাব্যও তার সঙ্গে পূর্বাচলে গিয়েছিল। আজ সকালে তার মরদেহও উদ্ধার করা হয়েছে। এটি একটি দুর্ঘটনা বলে মনে হলেও, এর পেছনে অন্য কোনো রহস্য রয়েছে কি না, তা পুলিশকে তদন্ত করে বের করতে হবে।”
অন্যদিকে, সুজানার পরিবারের পক্ষ থেকেও একই দাবি করা হয়েছে। তারা বলছেন, তাদের মেয়ে এমন কোনো কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল না যা তাকে বিপদের মুখে ফেলতে পারে। তারা পুলিশের কাছে অনুরোধ করেছেন, ঘটনার সঠিক তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
স্থানীয়রা জানান, পূর্বাচল এলাকার সড়কগুলো তুলনামূলক ফাঁকা এবং এখানে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেই। ফলে রাতের বেলায় এ ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। তারা বলেন, সড়কে যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে লেকে পড়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়।
পুলিশ ও প্রশাসন এ ঘটনায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। একই সঙ্গে এলাকাবাসীও পূর্বাচল সড়কে নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন। ঘটনাটির পেছনের প্রকৃত কারণ জানতে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এবং পুলিশের তদন্তের ফলাফলের অপেক্ষা করছে নিহতদের পরিবার ও স্থানীয়রা।
repoter