
ছবি: -সংগৃহীত ছবি
শারদীয় দুর্গাপূজা, ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম, প্রবারণা পূর্ণিমা ও লক্ষ্মীপূজাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান সামনে রেখে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১২ দিনের জন্য পরীক্ষা না নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত এ সময়ের মধ্যে কোনো পরীক্ষার দিন নির্ধারণ না করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে জারি করা এক আদেশে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। আদেশটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের জারি করা আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে ২০২৫ সালের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ছুটির তালিকা অনুমোদিত হয়েছে। ওই তালিকায় দুর্গাপূজা, বিজয়া দশমী, ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম, প্রবারণা পূর্ণিমা এবং লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ১২ দিন অবকাশকালীন ছুটি অনুমোদন করা হয়।
আদেশে আরও বলা হয়, ধর্মীয় উৎসবগুলোর যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে উদযাপনের জন্য নির্ধারিত এই সময়কালে যেন কোনো পরীক্ষার দিন নির্ধারণ করা না হয়, সে বিষয়ে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অনুরোধ করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও উৎসবে অংশ নিতে পারে, সেজন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রতি বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে ঘিরে ছুটির তালিকা প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়। তবে এ বছর দুর্গাপূজার পাশাপাশি মুসলিম ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানও একই সময়ে পড়ায় দীর্ঘ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় মনে করছে, এ ধরনের ছুটি শিক্ষার্থীদের পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশে ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোর অংশীদার হতে সহায়তা করবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ছুটির সময়ের মধ্যে কোনো পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থীরা উৎসবে অংশগ্রহণে অসুবিধায় পড়বে। অনেক সময় দেখা যায়, পরীক্ষার কারণে শিক্ষার্থীরা পূজা, প্রার্থনা বা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারে না। তাই এবারের নির্দেশনায় পরীক্ষার দিন এ সময়ে না রাখার বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশের বহুমাত্রিক সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সরকার এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সব ধর্মের মানুষ তাদের নিজ নিজ উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে পারলে সামাজিক সম্প্রীতি আরও দৃঢ় হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই এ নির্দেশনা দিয়েছে।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন তারা সংশ্লিষ্ট সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও বিদ্যালয়ে এ নির্দেশনা পৌঁছে দেয়। বিশেষ করে যেসব প্রতিষ্ঠান নিজস্ব পরীক্ষার সময়সূচি প্রণয়ন করে, তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
দেশের হিন্দু সম্প্রদায় শারদীয় দুর্গাপূজা ঘিরে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পালন করে থাকে। অপরদিকে মুসলিম সম্প্রদায় ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায় প্রবারণা পূর্ণিমা পালন করে থাকে। একই সময়ে লক্ষ্মীপূজাও পালিত হয়। তাই এই সময়ে দীর্ঘ ছুটি শিক্ষার্থীদের জন্য সমন্বিতভাবে উৎসব উদযাপনের সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ নির্দেশনায় অভিভাবকরাও স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, দীর্ঘ ছুটিতে পরীক্ষার চাপ না থাকায় শিক্ষার্থীরা স্বাচ্ছন্দ্যে পারিবারিক পরিবেশে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করতে পারবে। একই সঙ্গে সামাজিক বন্ধনও দৃঢ় হবে।
এছাড়া মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই নির্দেশনা শুধু পরীক্ষার সময়সূচি নয়, ক্লাস কার্যক্রমেও প্রভাব ফেলবে। তবে পরবর্তী সময়ে শিক্ষাবর্ষের মধ্যে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করা হবে, যাতে একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত না হয়।
repoter