ছবি: ছবি: সংগৃহীত
এক ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদ জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ ১০ বছর নির্ধারণের প্রস্তাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রস্তাবে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত হলেও বিএনপিসহ তিনটি দল এখনো ভিন্নমত পোষণ করেছে।
রবিবার (২২ জুন) রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফা সংলাপ শেষে এ তথ্য জানান কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
আলোচনায় অংশ নেওয়া দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি জানান, এদিন দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মতবিনিময় হয়। প্রথমত, প্রধানমন্ত্রীর সর্বোচ্চ মেয়াদকাল নির্ধারণ এবং দ্বিতীয়ত, সংবিধানের মূলনীতির কাঠামো নিয়ে।
আলী রীয়াজ বলেন, আলোচনার দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমরা একটি সুস্পষ্ট প্রস্তাবের জায়গায় পৌঁছেছি— যেখানে প্রস্তাব করা হয়েছে, একজন ব্যক্তি যেন জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ ১০ বছরের বেশি সময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন না করতে পারেন। এই প্রস্তাবকে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল সমর্থন করলেও বিএনপি, এনডিএম (ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট) এবং বিএলডিপি (বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি) ভিন্নমত প্রকাশ করেছে।
তিনি আরও জানান, এই তিনটি দল তাদের মতামত চূড়ান্তভাবে দিতে কিছুটা সময় চেয়েছে এবং বিষয়টি নিয়ে তারা দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামে আলোচনা করবে। তারা এই প্রস্তাবকে একটি বৃহত্তর কাঠামোর অংশ হিসেবে দেখছে, বিশেষ করে উচ্চকক্ষ গঠন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত কাঠামোর সঙ্গে এর সম্পর্ক রয়েছে বলে মন্তব্য করেছে।
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, “তিনটি দল ব্যতিক্রম হলেও বাকি সব রাজনৈতিক দল এই প্রস্তাবকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমর্থন জানিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, আগামী আলোচনাগুলোতে পূর্ণ ঐকমত্যের দিকে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হবে।”
দিনের আলোচনার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে ছিল সংবিধানের মূলনীতি। এ বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়, যাতে রাষ্ট্রের মূলনীতিগুলোর মধ্যে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার এবং গণতন্ত্রের বিষয়গুলোকে পুনর্ব্যাখ্যা বা সংযোজনের পরামর্শ দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত যাচাই-বাছাই করে ঐকমত্য কমিশন একটি পরিমার্জিত প্রস্তাব তৈরি করবে, যাতে রাষ্ট্রের নৈতিক ও আইনি কাঠামো আরও সুসংগঠিত হয়।
এদিকে, রাজনৈতিক দলগুলোর অনুরোধে আলোচনা সাময়িকভাবে দুই দিন স্থগিত রাখা হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক রীয়াজ। তিনি বলেন, দলগুলো তাদের নিজ নিজ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এসব গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব নিয়ে পর্যালোচনা করতে চায়। কমিশন সেই সময় তাদের দিয়েছে।
আলী রীয়াজ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এই দুই দিনের ভেতরে অসমাপ্ত বিষয়গুলোর ওপর স্পষ্ট মতামত পাওয়া যাবে এবং পরবর্তী সংলাপে পূর্ণ ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটি চূড়ান্ত সুপারিশমালা প্রণয়ন সম্ভব হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই উদ্যোগ দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে একটি নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক বিভাজন এবং পরস্পরের প্রতি অনাস্থার সংস্কৃতির মধ্যেও এমন এক প্ল্যাটফর্মে নানা মত ও অবস্থান নিয়ে দলগুলোর আলোচনায় অংশগ্রহণ দেশের গণতান্ত্রিক বিকাশে ইতিবাচক ইঙ্গিত বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
সংলাপের এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামোয় একটি সুসংহত ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের ভিত্তি গড়ে ওঠবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে, যা শুধু নির্বাচনী নয়, বরং রাষ্ট্র পরিচালনায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও ভারসাম্য আনবে।
এই প্রক্রিয়ার ফলাফল কেবল সময়ই বলবে, তবে আজকের আলোচনার ধারাবাহিকতায় আগামী দিনগুলোতে জাতীয় রাজনীতিতে একটি গঠনমূলক পরিবর্তনের আশা করছেন দেশের সচেতন নাগরিক সমাজ।
repoter




