ছবি: -সংগৃহীত ছবি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা টানা পঞ্চম দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। সম্পূরক বৃত্তি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নীতিমালা প্রণয়ন ও সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবারও প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। দাবি পূরণ না হলে আগামীতে আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দিয়েছে তারা।
মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার পর থেকেই শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয় এবং বিকেল পর্যন্ত সেখানে কর্মসূচি চালিয়ে যায়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরাও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে উপস্থিত ছিলেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রতিবাদী স্লোগান দেয়। তারা বলেন, "আটটা টু আটটা, বাজায় কার ঘণ্টা", "ভিসি স্যার জানেন নাকি, আমরা এখানে বসে গেছি", "হচ্ছে হবে বাদ দাও, কবে হবে বলে দাও", "সিন্ডিকেটের গদিতে আগুন জ্বালো", "জকসু আমার অধিকার, রুখে দেওয়ার সাধ্য কার", "বৃত্তি আমার অধিকার, মুখে দেওয়ার সাধ্য কার", "আবাসন বৃত্তি দিতে হবে, দিয়ে দাও", "এ লড়াইয়ে জিতবে কারা, জবিয়ান জবিয়ান"—এসব স্লোগানে ক্যাম্পাস মুখর হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ জবি শাখার আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ বলেন, সিন্ডিকেট বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত আসে তা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে সিন্ডিকেট কেবল জকসু সংবিধি প্রণয়নের একটি ধাপ। আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। যতদিন পর্যন্ত সম্পূরক বৃত্তি নিয়ে প্রশাসনের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা না আসবে, ততদিন আন্দোলন চলবেই।
একই সঙ্গে শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি একেএম রাকিব বলেন, "আমরা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। প্রশাসন সিন্ডিকেট বৈঠক ডাকলেও আমরা অপেক্ষা করছি সিদ্ধান্তের জন্য। যদি ইতিবাচক কোনো পদক্ষেপ না আসে, তাহলে আগামীকাল থেকে আমরা বাধ্য হয়ে কঠোর কর্মসূচিতে যাব।"
আন্দোলনকারীরা মনে করছেন, শিক্ষার্থীদের মৌলিক চাহিদা উপেক্ষা করে প্রশাসন বারবার সময়ক্ষেপণ করছে। তাই বৃত্তি, আবাসন ও জকসু কার্যকর করার বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা ছাড়া তারা রাজপথ ছাড়বেন না। শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি পরিষদ চালু না থাকায় তাদের ন্যায্য দাবি জানানো ও বাস্তবায়নের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে। ফলে জকসু পুনরায় চালুর মাধ্যমে তারা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ ফিরে পেতে চান।
ক্যাম্পাসজুড়ে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে এক ধরনের টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। তবে একই সঙ্গে শিক্ষার্থীরা বলছেন, আন্দোলনটি শান্তিপূর্ণ এবং প্রশাসনের সহযোগিতামূলক সিদ্ধান্ত এলে তারা রাজপথ ছেড়ে ক্লাসে ফিরতে প্রস্তুত।
শিক্ষার্থীদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি চলমান থাকায় স্বাভাবিক শিক্ষাব্যবস্থায়ও প্রভাব পড়ছে। অনেকে বলেন, দীর্ঘদিনের দাবি বারবার উপেক্ষিত হওয়ায় এখন তারা আর সময়ক্ষেপণ মেনে নেবেন না। প্রশাসনকে দ্রুত ও স্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে।
অন্যদিকে, শিক্ষক ও কর্মচারীদের একাংশও পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করছেন, আলোচনার মাধ্যমে বিষয়গুলোর দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত, যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশ অচিরেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারে।
টানা পঞ্চম দিনের এই অবস্থান কর্মসূচি প্রমাণ করছে যে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো আর অবহেলার পর্যায়ে নেই। তাদের দাবি পূরণ না হলে আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এখন প্রশাসনের সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে আন্দোলনের গতিপথ।
repoter




