ছবি: -সংগৃহীত ছবি
যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার চলমান বার্ষিক সামরিক মহড়াকে ‘শত্রুতামূলক অভিপ্রায়’ আখ্যা দিয়ে উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন নতুন করে পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, এই মহড়ার প্রতিক্রিয়ায় পিয়ংইয়ং তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির গতি আরও বাড়াবে।
দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধজাহাজ পরিদর্শনের সময় কিম জং উন বলেন, এই সামরিক মহড়া যুদ্ধ উসকে দেওয়ার এক সুস্পষ্ট বার্তা বহন করছে। তাঁর দাবি, উত্তর কোরিয়ার জন্য এর প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিকভাবেই আরও শক্তিশালী অস্ত্রভাণ্ডার তৈরি করা ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা রাখছে না।
কিম জং উন বলেন, উত্তর কোরিয়াকে দ্রুততার সঙ্গে তার পারমাণবিক কর্মসূচি এগিয়ে নিতে হবে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ মহড়ায় যেসব পারমাণবিক কৌশল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, সেগুলোর জবাব দিতেই এই উদ্যোগ। তাঁর ভাষায়, পারমাণবিক সক্ষমতা উত্তর কোরিয়ার নিরাপত্তার অপরিহার্য অংশ, যা কোনোভাবেই হ্রাস করা যাবে না।
চলতি সপ্তাহেই শুরু হয়েছে বার্ষিক যৌথ সামরিক মহড়া ‘উলচি ফ্রিডম শিল্ড’। এতে বৃহৎ পরিসরের কৌশলগত অনুশীলন এবং উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক সক্ষমতার বিরুদ্ধে আধুনিক প্রতিরক্ষা কৌশল পরীক্ষার বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মহড়াটি ১১ দিন ধরে চলার কথা থাকলেও ৪০টি ফিল্ড ট্রেনিং অনুশীলনের অর্ধেক পরবর্তীতে, সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং পরিস্থিতি উত্তপ্ত না করতে চাইছেন, তাই মহড়ার সময়সূচিতে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ উত্তর কোরিয়ার অবস্থান নরম করবে না। বরং পিয়ংইয়ং এটিকে আরও আগ্রাসী সংকেত হিসেবে নেবে।
ওয়াশিংটন ও সিউলের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, মহড়াটি সম্পূর্ণ প্রতিরক্ষামূলক প্রকৃতির এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষার উদ্দেশ্যেই তা আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু উত্তর কোরিয়া বরাবরই এই মহড়াগুলোকে আগ্রাসনের প্রস্তুতি হিসেবে আখ্যা দিয়ে আসছে এবং প্রায়শই এর প্রতিক্রিয়ায় নতুন অস্ত্র পরীক্ষা চালাচ্ছে।
আগামী মাসের শেষে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ওই বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অবস্থান ও সাম্প্রতিক ঘোষণাগুলো শীর্ষ আলোচ্যসূচি হবে বলে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে। আলোচনায় পিয়ংইয়ংয়ের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা মুখ্য এজেন্ডা হিসেবে স্থান পাবে।
কোরিয়া ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল ইউনিফিকেশনের বিশ্লেষক হং মিন এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার সাম্প্রতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে এটি স্পষ্ট হয়েছে যে দেশটি কোনোভাবেই নিরস্ত্রীকরণে রাজি নয়। বরং তারা পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারকে স্থায়ীভাবে উন্নত করার ইচ্ছা প্রকাশ করছে। তাঁর মতে, পিয়ংইয়ং আন্তর্জাতিক চাপকে উপেক্ষা করে পারমাণবিক সক্ষমতা বৃদ্ধি অব্যাহত রাখবে।
বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, এই পরিস্থিতি উত্তর-পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তা পরিবেশকে আরও জটিল করে তুলছে। যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষামূলক দাবির বিপরীতে উত্তর কোরিয়ার কড়া প্রতিক্রিয়া আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। এ অবস্থায় ভবিষ্যৎ আলোচনায় পিয়ংইয়ংয়ের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, কিম জং উনের সাম্প্রতিক বক্তব্য শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়াকে নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও বার্তা দিচ্ছে যে উত্তর কোরিয়া তাদের কৌশলগত নীতি থেকে সরে আসবে না। এই ঘোষণা কার্যত দেশটির পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে আরও একধাপ এগিয়ে নিল এবং ভবিষ্যৎ আলোচনার ক্ষেত্রকে কঠিন করে তুলল।
repoter

