ছবি: -সংগৃহীত ছবি
পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সিন্ধু পানিচুক্তি একতরফাভাবে স্থগিত করার সিদ্ধান্তে ভারতের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, ভারতের পানি কেবল ভারত ও তার কৃষকদের জন্য, শত্রু দেশের জন্য নয়। একই সঙ্গে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, ভারতের বিরুদ্ধে যেকোনো পারমাণবিক হুমকি আর সহ্য করা হবে না।
শুক্রবার ভারতের ৭৮তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাজধানী দিল্লির লালকেল্লায় দেওয়া এক ভাষণে মোদি বলেন, “রক্ত ও পানি একসঙ্গে প্রবাহিত হতে পারে না।” এ সময় তিনি ইঙ্গিত দেন, এপ্রিলে কাশ্মীরে সংঘটিত হামলার প্রতিক্রিয়ায় গৃহীত সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত অব্যাহত থাকবে।
মোদি বলেন, অতীতে যখন ভারতের কৃষকরা পানির সংকটে ভুগছিলেন, তখন ভারতের নদীগুলোর পানি দিয়ে শত্রু দেশ সেচ কার্য চালিয়েছে। কিন্তু এখন ভারতের পানি ব্যবহারের অধিকার থাকবে কেবল ভারত ও ভারতের কৃষকদের। কৃষকদের স্বার্থ এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় কোনো আপস করা হবে না বলেও তিনি জোর দিয়ে বলেন।
পাকিস্তান ইতিমধ্যে সতর্ক করেছে, ভারতের যেকোনো প্রচেষ্টা যদি পাকিস্তানে পানির প্রবাহ বন্ধ বা অন্যদিকে সরিয়ে দেয়, তবে সেটি তারা ‘যুদ্ধের ঘোষণা’ হিসেবে গণ্য করবে।
ভাষণে মোদি আরও বলেন, সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসবাদকে সমর্থনকারীদের মধ্যে ভারত কোনো পার্থক্য করে না। পাকিস্তানকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে পাকিস্তান যদি ভারতের ওপর কোনো হামলা চালায়, তবে তার কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
পারমাণবিক হুমকি প্রসঙ্গে তিনি স্পষ্ট সতর্কবার্তা দিয়ে বলেন, “ভারত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আর কোনো পারমাণবিক হুমকি সহ্য করা হবে না। দীর্ঘদিন ধরে পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইল চলছিল, কিন্তু এখন আর এই ব্ল্যাকমেইল সহ্য করা হবে না।”
ইসলামাবাদ অবশ্য অতীতেও ভারতের এ ধরনের অভিযোগকে উসকানিমূলক ও অযৌক্তিক বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। পাকিস্তানের দাবি, ভারত ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য এসব মন্তব্য করছে।
মোদি তার ভাষণে জাতীয় নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ দমন এবং কৃষকদের অধিকার রক্ষায় দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ভারতের অভ্যন্তরে কিংবা সীমান্তে যে কোনো ধরনের হুমকি মোকাবিলায় সরকার প্রস্তুত। পানির মতো গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ও কৃষি উৎপাদনের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজন হলে কড়া পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করবে না ভারত।
ভাষণের বিভিন্ন অংশে তিনি পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগও পুনর্ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারতের অবস্থান যে দৃঢ় ও আপসহীন, তা স্পষ্ট করার চেষ্টা করেন। তার বক্তব্যে পরিষ্কার বার্তা ছিল—ভারতের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ধরনের চাপ বা ব্ল্যাকমেইল আর কার্যকর হবে না।
মোদি বলেন, “আমাদের কৃষকরা যখন পানির জন্য কষ্ট পাচ্ছেন, তখন ভারতের পানি দিয়ে শত্রুর কৃষিজমি সেচ দেওয়া চলতে পারে না। ভারতের সম্পদ রক্ষায় এবং জনগণের অধিকার সুরক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, সন্ত্রাসবাদ ও তার মদতদাতাদের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থান সর্বদা কঠোর থাকবে। সন্ত্রাসী কিংবা সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক—কারও ক্ষেত্রেই কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
তার এই বক্তব্যকে ঘিরে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেতে পারে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। কারণ সিন্ধু পানিচুক্তি দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা, যা পানি বণ্টন নিয়ে বিরোধ নিরসনে ভূমিকা রেখেছে। ভারতের একতরফা পদক্ষেপ পাকিস্তানের কাছে কেবল অর্থনৈতিক নয়, রাজনৈতিকভাবেও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
মোদি সরকারের এই অবস্থান স্পষ্ট করে দিচ্ছে, পাকিস্তান থেকে আসা যেকোনো হুমকি—তা সন্ত্রাসবাদ, সীমান্ত উত্তেজনা বা পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইল—ভারত এখন থেকে কঠোরভাবে মোকাবিলা করবে। এ অবস্থায় দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী উত্তেজনার আশঙ্কা আরও বেড়ে গেল।
repoter

