ঢাকা,  শুক্রবার
১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ , ০৩:৪২ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ: ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল * গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, দেশে–বিদেশে উদ্বেগ * ঢাকা–দিল্লি সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা, আজ চালু থাকছে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র * ৬৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ জব্দ, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে গতি আনছে সরকার * যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ ফিরিয়ে আনছেন ট্রাম্প, সমালোচনার কেন্দ্রে ভেনেজুয়েলা অভিযান * পাবনার বেড়ায় স্পিডবোটে এসে বাজারে ডাকাতি, ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত * যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভেনেজুয়েলা অভিযান: মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে * ট্রাম্পের ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা: ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে নতুন জটিলতা * গুম ও মানবতাবিরোধী অভিযোগে ১৩ সেনা কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে * বিএনপির ৪০টির বেশি আসনে মনোনয়নসংক্রান্ত অসন্তোষ, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ব্যস্ত সমাধান খুঁজতে

অবৈধ জাল ও প্রাকৃতিক সংকটে ইলিশ উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে: মৎস্য উপদেষ্টা

repoter

প্রকাশিত: ০৬:৫১:০৯অপরাহ্ন , ২৫ আগস্ট ২০২৫

আপডেট: ০৬:৫১:০৯অপরাহ্ন , ২৫ আগস্ট ২০২৫

-সংগৃহীত ছবি

ছবি: -সংগৃহীত ছবি

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানিয়েছেন, অবৈধ জাল ব্যবহার, জাটকা নিধন পুরোপুরি বন্ধ না হওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং নদীর নাব্যতা সংকটসহ নানা কারণে দেশে ইলিশের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাচ্ছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার শক্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সোমবার (২৫ আগস্ট) বরিশাল ক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত “উপকূলীয় এলাকায় মহিষের চারণভূমি সংকুচিত হওয়া, উন্নয়নের সম্ভাবনা ও সমাধান” শীর্ষক কর্মশালা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

ফরিদা আখতার বলেন, “কারেন্ট জাল ও অন্যান্য অবৈধ জালের কারণে ইলিশের প্রাপ্যতা দিন দিন কমছে। এ অবস্থা পরিবর্তনে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। অবৈধভাবে মাছ ধরা রোধে কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে। আশা করছি, আগামীতে ইলিশের উৎপাদন বাড়বে এবং বাজারে দামের চাপও কমে আসবে।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ইলিশের দামের ওপর বাজারব্যবস্থার অসঙ্গতিও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। নদী থেকে বাজারে আসার পথে বিভিন্ন পর্যায়ে হাতবদল প্রক্রিয়া চলে, যার ফলে দাম বেড়ে যায়। এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি ব্যবস্থা চালু করতে চাই যেখানে সরাসরি উৎপাদক ও বাজারের মধ্যে স্বচ্ছ সংযোগ তৈরি হবে। এতে ভোক্তারা ন্যায্য দামে ইলিশ পাবেন এবং জেলেদের প্রাপ্য মুনাফাও নিশ্চিত হবে।”

এ সময় ফরিদা আখতার মহিষের চারণভূমি সংকট নিয়েও কথা বলেন। তিনি জানান, দেশের উপকূলীয় এলাকায় ক্রমেই চারণভূমি কমে আসছে, যার ফলে মহিষ পালন হুমকির মুখে পড়ছে। চারণভূমি সংরক্ষণ করে মহিষ পালন বাড়ানো গেলে দেশে মাংসের ঘাটতি পূরণে সহায়ক ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, “চারণভূমি রক্ষা করে মহিষের মাংস উৎপাদন বাড়াতে পারলে দেশে মাংসের সার্বিক সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে, যা খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”

বরিশালে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় গবেষক, পশুচিকিৎসক, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের খামারি এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। তারা উপকূলীয় অঞ্চলে মহিষের চারণভূমি সংকট, সম্ভাবনা ও সমাধান নিয়ে নানা মতামত তুলে ধরেন। আলোচনায় বক্তারা বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করে সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে মহিষ পালন সম্প্রসারণ করা গেলে শুধু মাংস উৎপাদন নয়, স্থানীয় অর্থনীতি ও গ্রামীণ জীবিকা উন্নয়নেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা তার বক্তব্যে আরও বলেন, দেশের মৎস্য খাত কেবল খাদ্য সরবরাহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি রপ্তানি আয়েরও বড় উৎস। ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই ইলিশের উৎপাদন হ্রাস পাওয়া জাতীয় অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলছে। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে অবৈধ জাল নিয়ন্ত্রণ, জাটকা সংরক্ষণ, নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সরকার বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।

তিনি বলেন, নদীভাঙন, পানি প্রবাহে পরিবর্তন ও জলবায়ু সংকট ইলিশের প্রজনন ও প্রাপ্তি হ্রাসে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। এসব সমস্যা সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া জরুরি। স্থানীয় জনগণকে সচেতন করা, বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করা এবং টেকসই মৎস্য আহরণ নিশ্চিত করার ওপর তিনি জোর দেন।

কর্মশালার আলোচনায় বক্তারা বলেন, অবৈধ জাল ব্যবহারের কারণে শুধু ইলিশ নয়, অন্যান্য প্রজাতির মাছও হুমকির মুখে পড়ছে। তারা মনে করেন, প্রশাসনিক পদক্ষেপের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। মৎস্যজীবীদের জীবনমান উন্নত না হলে তারা অবৈধভাবে মাছ ধরতে বাধ্য হয়। তাই তাদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা জরুরি।

আলোচনায় উঠে আসে, মহিষ পালন বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে এক ঐতিহ্যবাহী কৃষিজ কার্যক্রম। কিন্তু চারণভূমি সংকুচিত হওয়ায় এর ধারাবাহিকতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। একদিকে ভূমি দখল ও নগরায়ণ, অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চারণভূমি হারিয়ে যাচ্ছে। এতে খামারিরা মহিষ পালন কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ পরিস্থিতি পরিবর্তনে নীতি সহায়তা এবং প্রণোদনা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়।

ফরিদা আখতার বলেন, “আমরা যদি মহিষের চারণভূমি সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারি, তবে শুধু মাংস উৎপাদনই নয়, দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনেও দেশে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে এবং গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী হবে।”

কর্মশালার শেষাংশে বক্তারা ইলিশ সংরক্ষণ ও মহিষ পালন সম্প্রসারণ—উভয় ক্ষেত্রেই সমন্বিত নীতিমালা তৈরির আহ্বান জানান। তারা বলেন, প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাংলাদেশের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতকে আরও সমৃদ্ধ করা সম্ভব।

repoter