ছবি: -সংগৃহীত ছবি
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর হামলার ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ আখ্যা দিয়ে এর দায় অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর বর্তানোর দাবি জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম সামনের সারির নেতা হিসেবে নুরের ওপর ন্যক্কারজনক এ হামলা শুধু ব্যক্তিকে নয়, গণআন্দোলনের শক্তিকেও লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে।
রোববার (৩১ আগস্ট) ঢামেক হাসপাতালে আহত নুরুল হক নুরকে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব মন্তব্য করেন। নুর বর্তমানে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার নাকে আঘাতজনিত জখম ও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চিকিৎসকরা। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ জানান, নুরের চিকিৎসার পূর্ণ দায়িত্ব সরকার নিয়েছে এবং প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দেশের বাইরে পাঠানো হবে।
তিনি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, কোনো সভ্য দেশে বিরোধী মত দমনের জন্য রাজনৈতিক নেতার ওপর এভাবে হামলা করা গ্রহণযোগ্য নয়। আওয়ামী লীগের আমলেও প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। অথচ আজ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়েও এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যা গণতান্ত্রিক চর্চার জন্য হুমকিস্বরূপ।
উপদেষ্টা বলেন, এ হামলা নিছক ব্যক্তিগত বিদ্বেষ থেকে আসেনি; বরং ফ্যাসিবাদী শক্তি তাদের ক্ষোভ প্রকাশের জন্য এই পন্থা নিয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের শক্তি যে গণআন্দোলন সৃষ্টি করেছে, সেটিকে দুর্বল করার জন্য এই হামলার মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, সরকার এসব সহ্য করবে না এবং দায়ীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনবে। ইতোমধ্যে একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের ভেতরে কিছু প্রতিষ্ঠান ফ্যাসিবাদের পক্ষে কাজ করছে, যেগুলোকে খতিয়ে দেখা হবে। কোনো প্রতিষ্ঠান যদি রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভেতর থেকে গণতন্ত্রবিরোধী শক্তিকে প্রশ্রয় দেয়, তবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নুরের ওপর হামলার জন্য জাতীয় পার্টিকে দায়ী করেন আসিফ মাহমুদ। তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রথম হামলা তাদের পক্ষ থেকেই চালানো হয়। একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হয়ে তারা কীভাবে মব অ্যাকশন ঘটাতে পারে, সেটিই প্রশ্ন। তিনি জাতীয় পার্টিকে একটি চিহ্নিত ফ্যাসিবাদী দল হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তাদের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক অঙ্গনে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা চলছে।
তিনি এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, অনেকেই চান না জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে অনুষ্ঠিত হোক। সেই কারণে নির্বাচন পেছানোর নানা প্রচেষ্টা চলছে। ইনক্লুসিভ নির্বাচনের নামে আওয়ামী লীগকে আবার সামনে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর মধ্যেই জাতীয় পার্টির ভূমিকা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে উপদেষ্টা জানান, সরকার এখনো এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। সেখানেই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার মতো বড় সিদ্ধান্ত আলোচনার মাধ্যমে নেওয়া উচিত।
আসিফ মাহমুদ আরও জানান, রাজনৈতিক সংঘাত মোকাবিলায় সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। তিনি নুরের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে বলেন, আন্দোলনের সময় যারা জনগণের দাবি তুলে ধরেছেন, তাদের ওপর হামলা গণতান্ত্রিক চর্চাকে পিছিয়ে দেয়। এ ধরনের হামলা সমাজে আরও বিভাজন সৃষ্টি করে। তাই সরকারের দায়িত্ব হলো দ্রুততম সময়ে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা।
উপদেষ্টা নুরুল হক নুরের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন এবং দেশবাসীর প্রতি শান্ত থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসতে হলে রাজনৈতিক সহনশীলতা অপরিহার্য। তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না এবং সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নুরকে দেখতে আসা তার দলের নেতাকর্মীরাও হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা অভিযোগ করেন, পরিকল্পিতভাবে নুরকে টার্গেট করা হয়েছে। তবে তারা একই সঙ্গে সরকারের আশ্বাসের ওপর আস্থা রেখে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান।
হাসপাতাল প্রাঙ্গণে উপস্থিত সাধারণ মানুষও ঘটনার নিন্দা জানায়। তারা বলেন, রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকা স্বাভাবিক, তবে সহিংসতা দিয়ে তা মেটানো যায় না। রাষ্ট্র যদি যথাসময়ে কঠোর অবস্থান না নেয়, তবে ভবিষ্যতে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হতে পারে।
নুরের ওপর হামলার ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে নিন্দা ও প্রতিবাদ এসেছে। আগামী দিনে এ ঘটনা জাতীয় রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা আলোচনা শুরু হয়েছে।
repoter




