ছবি: -সংগৃহীত ছবি
রাজধানীর মহাখালীতে একটি পেট্রোল পাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, যা এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। রবিবার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় মহাখালী ইউনিভার্সেল হাসপাতালের পাশে অবস্থিত ইউরিকা পেট্রোল পাম্পে এ আগুনের সূত্রপাত হয়। ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় জানা যায়, হঠাৎ করেই জ্বালানি তেল সংরক্ষণ এলাকাটি থেকে ধোঁয়া ও আগুনের শিখা বের হতে দেখা যায়। অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে চারপাশের এলাকা থেকে দৌড়ে সরে যান। আগুন লাগার সময় কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়, যা আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে তোলে। আশেপাশের ভবনের মানুষজন দ্রুত নিচে নেমে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেন।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে পেট্রোল পাম্পের ভেতরে এবং আশেপাশে থাকা গাড়ি ও অন্যান্য সম্পদের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিস্ফোরণের শব্দ এতটাই জোরালো ছিল যে আশপাশের ভবনের কাঁচ ভেঙে যায় এবং অনেকেই ভয়ে বাইরে চলে আসেন।
ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য তাদের দল সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। আগুনের উৎসস্থল এবং জ্বালানি সংরক্ষণ এলাকা হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছুটা বেশি সময় লাগছে। তারা বলেন, পেট্রোল বা অকটেনের মতো দাহ্য পদার্থ থাকায় অগ্নিকাণ্ড দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং বিস্ফোরণের ঝুঁকি থেকে যায়। এ কারণে ফায়ার সার্ভিস অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পেট্রোল পাম্পটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথাযথভাবে কার্যকর ছিল না। নিয়মিত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি পরীক্ষা এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় আগুন লাগার পর তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ঘটনার কারণ তদন্ত করে দেখা হবে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার কোনো ঘাটতি থাকলে তা শনাক্ত করা হবে।
ঘটনাস্থলে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও উপস্থিত হয়। তারা চারপাশের এলাকা ঘিরে রাখে এবং সাধারণ মানুষকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে যায়। মহাখালী এলাকা দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়, ফলে ওই এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। জরুরি ভিত্তিতে গাড়ি চলাচল অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।
পাশের ইউনিভার্সেল হাসপাতালের রোগী ও স্বজনদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়। অনেককে সাময়িকভাবে ভবনের ভেতরের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মচারীরা বলেন, আগুন লাগার পর তারা প্রথমে ভয় পেলেও ফায়ার সার্ভিসের দ্রুত উপস্থিতিতে কিছুটা স্বস্তি পান।
এদিকে, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, অগ্নিকাণ্ডের কারণে আশেপাশের দোকানপাট ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। অনেক দোকানদার দ্রুত তাদের মালামাল সরিয়ে নেন। তবে প্রচণ্ড ধোঁয়া এবং আগুনের তাপে এলাকাজুড়ে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
আগুনের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা গুজবও ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ দাবি করেন, বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। তবে ফায়ার সার্ভিস সাধারণ মানুষকে গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানায়। তারা জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং আগুনের বিস্তার রোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে কিছু জানা যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তদন্ত ছাড়া সুনির্দিষ্ট কারণ বলা যাবে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, বিদ্যুৎ সংযোগের ত্রুটি বা জ্বালানি লিকেজ থেকে এ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা শঙ্কা প্রকাশ করেন যে এ ধরনের ঘটনা আবারও ঘটতে পারে। তারা দাবি করেন, শহরের আবাসিক এলাকা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার কাছাকাছি অবস্থিত জ্বালানি পাম্পগুলোতে আরও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। অনেকেই বলেন, পেট্রোল পাম্পগুলোতে নিয়মিত পরিদর্শন ও ঝুঁকি মূল্যায়ন করা না হলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে।
ঘটনার পর সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার পক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের কাজ শুরু করা হয়েছে। আগুনে ঠিক কতটা ক্ষতি হয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়, তবে ধারণা করা হচ্ছে কোটি টাকার সম্পদ পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনার পর ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত জানা যাবে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা মনে করেন, এমন দুর্ঘটনা প্রতিরোধযোগ্য ছিল যদি আগে থেকে যথাযথ সতর্কতা নেওয়া হতো। স্থানীয়দের অভিযোগ, নগরীর অনেক পেট্রোল পাম্পেই পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম নেই এবং কর্মীদেরও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় না।
বিস্তারিত তদন্ত শেষে এ বিষয়ে সুপারিশ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। তারা আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি শুধু মহাখালী নয়, পুরো রাজধানীজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। শহরের মানুষ আবারও সচেতন হয়েছেন নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনাগুলো নিয়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরায়নের এই দ্রুত বিস্তারের যুগে নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব না দিলে যে কোনো সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
repoter




