
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিক চার্জ দাখিল করা হবে আগামীকাল রোববার। কোর্ট প্রসিডিংস ট্রাইব্যুনালের অনুমতি সাপেক্ষে বিটিভির মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন মামলার প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম।
শনিবার বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, মামলায় অভিযোগ আমলে নেওয়ার শুনানির সময় বিটিভির মাধ্যমে তা সরাসরি সম্প্রচারের অনুমতি দেওয়া হতে পারে। এর আগে গত ১২ মে তদন্ত সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত প্রতিবেদন চিফ প্রসিকিউটরের দপ্তরে জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার জন্য শেখ হাসিনাকে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, প্রতিবেদনটিতে শেখ হাসিনাসহ তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, নির্যাতন ও দমন-পীড়নের সুসংহত পরিকল্পনার অভিযোগ আনা হয়েছে। তদন্ত শুরুর ৬ মাস ২৮ দিনের মধ্যে শেখ হাসিনাকে 'প্রধান মাস্টারমাইন্ড' এবং 'সুপিরিয়র কমান্ডার' হিসেবে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়।
প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রথমত, ১৪ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে উসকানিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় শক্তিকে প্ররোচিত করেন। সেখানে তিনি শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ এবং ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে অভিহিত করেন, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর ওপর শিক্ষার্থীদের ওপর সহিংস আক্রমণ চালানোর জন্য একটি সরাসরি প্ররোচনা ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা সরাসরি বিভিন্ন বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে আন্দোলনরত নিরস্ত্র নাগরিকদের দমন করতে হেলিকপ্টার, ড্রোন ও এপিসিসহ আধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। তদন্তে পাওয়া কিছু টেলিফোন কথোপকথনের ভিত্তিতে এসব নির্দেশের সত্যতা উঠে এসেছে।
তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম অভিযোগে নির্দিষ্ট ঘটনাবলির ভিত্তিতে অভিযোগ আনা হয়েছে। কোথায় কীভাবে নির্দিষ্ট সময় ও স্থানে শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশে নৃশংসতা সংঘটিত হয়েছে, সে সম্পর্কে প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে। এসব অভিযোগে বলা হয়েছে, আন্দোলনকারীদের ওপর রাষ্ট্রীয় বাহিনী ছাড়াও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও ছাত্রলীগকে অস্ত্রসহ আক্রমণে ব্যবহৃত করা হয়েছিল।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আন্দোলনের সময় প্রায় দেড় হাজার মানুষ নিহত হয় এবং ২৫ হাজারের বেশি মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। নারীদের ওপর যৌন সহিংসতা চালানো হয়, আহতদের হাসপাতালে নিতে বাধা দেওয়া হয়, চিকিৎসা দিতে বাধা দেওয়া হয়, এমনকি পোস্টমর্টেমও ঠেকানো হয়।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, শেখ হাসিনা নিজে হাসপাতালে গিয়ে আহত আন্দোলনকারীদের চিকিৎসা না দিতে নির্দেশ দেন। এমনকি যেসব রোগী ব্যথা সহ্য করতে না পেরে হাসপাতাল ছাড়তে চাইছিলেন, তাদেরও সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি। তিনি এমন নির্দেশও দিয়েছিলেন যাতে অবহেলার ফলে শরীরের পচন ধরলে তা কেটে ফেলতে হয়।
এছাড়া সরকারি স্থাপনায় আগুন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলেও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। বলা হয়, আন্দোলনকারীদের ওপর দায় চাপাতে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ লোকদের দিয়ে এসব অগ্নিসংযোগ করানো হয়।
এই মামলার শুনানি ও প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে পরিচালিত হচ্ছে বলে ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানিয়েছে। রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে চার্জ উপস্থাপনের মাধ্যমে মামলার বিচারিক প্রক্রিয়ার নতুন ধাপ শুরু হবে। সংশ্লিষ্ট মহলে এই বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে, যা বাংলাদেশে উচ্চ পর্যায়ের রাজনীতিকের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিচারিক অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
repoter