ঢাকা,  শুক্রবার
১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ , ০২:২৫ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ: ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল * গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, দেশে–বিদেশে উদ্বেগ * ঢাকা–দিল্লি সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা, আজ চালু থাকছে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র * ৬৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ জব্দ, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে গতি আনছে সরকার * যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ ফিরিয়ে আনছেন ট্রাম্প, সমালোচনার কেন্দ্রে ভেনেজুয়েলা অভিযান * পাবনার বেড়ায় স্পিডবোটে এসে বাজারে ডাকাতি, ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত * যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভেনেজুয়েলা অভিযান: মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে * ট্রাম্পের ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা: ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে নতুন জটিলতা * গুম ও মানবতাবিরোধী অভিযোগে ১৩ সেনা কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে * বিএনপির ৪০টির বেশি আসনে মনোনয়নসংক্রান্ত অসন্তোষ, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ব্যস্ত সমাধান খুঁজতে

মাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনার পর আতঙ্কে শিশু শিক্ষার্থীরা, বাড়লো ছুটি

repoter

প্রকাশিত: ১১:১৫:২৬পূর্বাহ্ন, ২৯ জুলাই ২০২৫

আপডেট: ১১:১৫:২৬পূর্বাহ্ন, ২৯ জুলাই ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: ছবি: সংগৃহীত

চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরেও স্বাভাবিক হয়নি রাফিয়া-আয়ান, নিহত বেড়ে ৩৪; ৩ আগস্ট খুলছে মাইলস্টোন স্কুল

রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর এখনো স্বাভাবিক হয়নি আহত শিক্ষার্থীদের মনোজগৎ। চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরলেও ভয় কাটছে না কারও। অনেকেই নিঃশব্দে সময় কাটাচ্ছে, কেউ কেউ ঘুমের মধ্যে আঁতকে উঠছে।

১২ বছর বয়সী রাফসি আক্তার রাফিয়া জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট থেকে চিকিৎসা শেষে গত রবিবার বাড়ি ফিরেছে। কিন্তু শারীরিকভাবে সুস্থ হলেও মানসিকভাবে সে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। তার বাবা মো. শামীম জানান, আগে যে মেয়েটি সারাক্ষণ চঞ্চলতা করত, এখন সে একদম চুপচাপ হয়ে গেছে। ডাকা সত্ত্বেও কোনো সাড়া দেয় না। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী মেয়েকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য তারা নানা চেষ্টায় ব্যস্ত রয়েছেন, তবে আতঙ্ক এখনো কাটেনি।

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আয়ান খানও একইভাবে হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরেছে। আগুনে তার শরীর তুলনামূলকভাবে কম পুড়লেও দুই কানে ও হাতে ফোসকা পড়েছে। তার ফুপু শান্তা ইসলাম জানান, হাত দুটো এখনো লাল ছোপ ছোপ হয়ে আছে এবং সে রাতে আতঙ্কে ঘুম ভেঙে চিৎকার করে ওঠে।

অন্যদিকে একই দুর্ঘটনায় আহত আরেক শিক্ষার্থী সাহিল ফারাবি আয়ান (১৪) রবিবার দিবাগত রাতে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান জানান, সাহিলের শরীরের ৪০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল এবং শ্বাসনালিও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। লাইফ সাপোর্টে থাকলেও তাকে বাঁচানো যায়নি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মাইলস্টোন স্কুলে ঘটে যাওয়া এ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৩৪ জন। এর মধ্যে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ১৮ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১৪ জন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন মারা গেছেন। আহত অবস্থায় বর্তমানে তিনটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪৫ জন। বার্ন ইনস্টিটিউটে ৩৩ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১১ জন এবং মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে একজন চিকিৎসা নিচ্ছেন।

বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাসির উদ্দীন জানান, বর্তমানে চিকিৎসাধীন ৩৩ জনের মধ্যে ২৭ জনই শিশু। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং তিনজন সংকটাপন্ন। তিনি বলেন, “সুখবর হচ্ছে, মাঝারি মাত্রার দগ্ধ হওয়া তিনজন শিক্ষার্থীর শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে। তাদের পরবর্তী ড্রেসিংয়ের পর বাসায় পাঠানো হবে, পারিবারিক অনুরোধ ও আবহাওয়ার কথা বিবেচনায় রেখে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

এদিকে, দুর্ঘটনার পর থেকে ছুটি বাড়িয়েছে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ। প্রথমে ২১ জুলাই দুর্ঘটনার পর ২২, ২৩ ও ২৪ জুলাই তিন দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় ২৭ ও ২৮ জুলাই ছুটি বাড়ানো হয়। সর্বশেষ তৃতীয় দফায় আরও তিন দিনের ছুটি বাড়ানো হয়েছে, যার ফলে আগামী ৩ আগস্ট (রবিবার) স্কুলটি পুনরায় খুলবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ভাইস প্রিন্সিপাল (প্রশাসন) মো. মাসুদুল আলম।

স্কুলের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুল জানান, দুর্ঘটনার পর থেকে অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য শিক্ষকরা ফোনে কাউন্সেলিং করছেন। এই কাউন্সেলিং প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই ধাপে ধাপে ছুটি বাড়ানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে আগামী ৩ আগস্ট থেকে দিয়াবাড়ী ক্যাম্পাসে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে।

এই দুর্ঘটনার পর পুরো ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকাজুড়ে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। নিহতদের স্মরণে শ্রদ্ধা জানানো ও বেঁচে থাকা শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে প্রশাসনিক ও মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে শিশুদের মানসিক আঘাত কাটিয়ে আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা।

repoter