
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটির বর্তমান অবস্থা জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। গত শনিবার (৮ মার্চ) শিশুটিকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) থেকে লাইফ সাপোর্টে রেখে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়। সোমবার (১০ মার্চ) সন্ধ্যায় আইএসপিআর জানায়, শিশুটি এখনও লাইফ সাপোর্টে রয়েছে এবং তার অবস্থা সংকটাপন্ন।
আইএসপিআরের তথ্য অনুযায়ী, শিশুটিকে সিএমএইচে স্থানান্তরের সময় সম্পূর্ণ অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। তখন তার রক্তচাপ ছিল ১২০/৭০ মি.মি. (কার্ডিয়াক সাপোর্টসহ), হৃদস্পন্দন ১১৮/মিনিট এবং অক্সিজেনের মাত্রা ৯৬ শতাংশ। শিশুটির গলার সামনে গভীর ক্ষত এবং শরীরের অন্যান্য স্পর্শকাতর স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
শিশুটির যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সিএমএইচে একটি উচ্চ পর্যায়ের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডে রয়েছেন কমান্ড্যান্ট সিএমএইচ ঢাকা, চিফ সার্জন জেনারেল, শিশু বিভাগ, স্ত্রী ও ধাত্রী বিদ্যা বিভাগ, প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ, শিশু সার্জারি বিভাগ, আবেদন বিদ্যা বিশেষজ্ঞ এবং শিশু নিউরোলজিস্ট।
মেডিকেল বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী শিশুটির পেট, বুক ও মস্তিষ্কের সিটি স্ক্যান, পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাফি, বুকের এক্স-রে এবং রক্তের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষায় শিশুটির Pneumothorax (RT), ARDS এবং Diffuse Cerebral Edema ধরা পড়েছে। বর্তমানে শিশুটিকে আইসিইউ প্রটোকল অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) মাগুরা শহরের নান্দুয়ালী এলাকায় শিশুটির বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গেলে বোনের শ্বশুর হিটু শেখ (৫০) তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। ওইদিন বেলা ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। শুক্রবার (৭ মার্চ) রাতে শিশুটির অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয় এবং শনিবার সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শিশুটির যৌনাঙ্গে ক্ষত রয়েছে এবং গলায় বড় ক্ষত পাওয়া গেছে। ওড়নাজাতীয় কিছু দিয়ে শিশুকে ফাঁস দেওয়া হয়েছিল এবং বুকে প্রচণ্ড চাপ দেওয়া হয়েছিল। এতে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাব দেখা দিয়েছে এবং ফুসফুসে বাতাস জমে গেছে। রোববার (৯ মার্চ) সকালে শিশুটির বুকে অস্ত্রোপচার করে অতিরিক্ত বাতাস বের করার জন্য টিউব বসানো হয়েছে।
এদিকে, ধর্ষণের ঘটনায় শিশুটির দুলাভাই হিটু শেখ, তার বাবা রাতুল শেখ, ভাই সজীব হোসেন এবং মা জাবেদা বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রোববার রাত ১২টার দিকে মাগুরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুল মতিনের আদালতে শুনানি হয়। পুলিশের রিমান্ড আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত হিটু শেখকে ৭ দিন এবং বাকি তিন আসামিকে ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এছাড়া, হাইকোর্ট মাগুরার ধর্ষণের শিকার শিশুটির ছবি, ভিডিও ও পরিচয় শনাক্তকরণ সব বিষয় দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে। পুলিশ, সাইবার ক্রাইম ইউনিট এবং বিটিআরসিকে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। এছাড়া, শিশুটির ছবি ও নাম প্রকাশকারীদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৪ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
repoter