ঢাকা,  শুক্রবার
১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ , ০৩:৩৯ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ: ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল * গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, দেশে–বিদেশে উদ্বেগ * ঢাকা–দিল্লি সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা, আজ চালু থাকছে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র * ৬৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ জব্দ, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে গতি আনছে সরকার * যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ ফিরিয়ে আনছেন ট্রাম্প, সমালোচনার কেন্দ্রে ভেনেজুয়েলা অভিযান * পাবনার বেড়ায় স্পিডবোটে এসে বাজারে ডাকাতি, ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত * যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভেনেজুয়েলা অভিযান: মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে * ট্রাম্পের ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা: ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে নতুন জটিলতা * গুম ও মানবতাবিরোধী অভিযোগে ১৩ সেনা কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে * বিএনপির ৪০টির বেশি আসনে মনোনয়নসংক্রান্ত অসন্তোষ, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ব্যস্ত সমাধান খুঁজতে

লটারিতে জেলা প্রশাসক পদায়নের গুঞ্জন নাকচ করলেন জনপ্রশাসন সচিব

repoter

প্রকাশিত: ০৭:০৪:১২অপরাহ্ন , ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আপডেট: ০৭:০৪:১২অপরাহ্ন , ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

-সংগৃহীত ছবি

ছবি: -সংগৃহীত ছবি

আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ প্রশাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদ জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগে লটারির মাধ্যমে পদায়নের কোনো সুযোগ নেই বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান। বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

জনপ্রশাসন সচিব বলেন, “কখনও, কোনো দিন লটারির মাধ্যমে সিভিল সার্ভিসে পদায়ন হয়নি। এখনও হচ্ছে না, ভবিষ্যতেও হবে না।” এ সময় তিনি চলমান জল্পনা-কল্পনাকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেন এবং যোগ করেন যে ডিসি নিয়োগ একটি সুসংহত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হয়ে থাকে, যা এককভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নয়।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, “বর্তমানে যেসব অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোর ভিত্তিতে কিছু ডিসিকে প্রত্যাহার করা হচ্ছে। আমাদের একটি ফিট লিস্ট আছে। এরই মধ্যে কিছু নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে এবং সামনে আরও হবে। যেসব স্থানে স্থিতিশীলতা রয়েছে, যেমন অনেক যুগ্ম-সচিব আছেন যারা ডিসি পদে উপযুক্ত, তাদের নির্বাচনের আগে মাঠ প্রশাসনে আনা হবে। সেইসব জায়গায় প্রয়োজন অনুযায়ী ডিসিদের প্রতিস্থাপন করা হবে।”

মোখলেস উর রহমান বলেন, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য জেলা প্রশাসকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা (ইউএনও) সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, এরপর নির্বাচন পরিচালনার বড় দায়িত্ব থাকে ডিসিদের ওপর। ফলে নির্বাচনকালীন সময়ে সঠিক জনবল বাছাইয়ের বিষয়টিতে কোনো প্রকার অবহেলা করা সম্ভব নয়।

তিনি আরও জানান, ডিসি নিয়োগের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সাত সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। এছাড়া আলাদা একটি পাঁচ সদস্যের ডিসি সিলেকশন কমিটি আছে। প্রক্রিয়াটি হলো—প্রথমে ফিট লিস্ট তৈরি করা হয়, এরপর সেটি কমিটির আলোচনায় উপস্থাপন করা হয়। সেখান থেকে যোগ্য কর্মকর্তাদের নাম বাছাই করা হয়। নির্বাচিত প্রার্থীদের নাম প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। অনুমোদনের পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে নিয়োগ কার্যকর করে।

তিনি বলেন, “অনেকেই মনে করেন পুরো প্রক্রিয়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এককভাবে সম্পন্ন করে। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। এটি একটি ধাপে ধাপে অগ্রসর হওয়া প্রক্রিয়া, যেখানে একাধিক কমিটি ও সর্বোচ্চ পর্যায়ের অনুমোদন যুক্ত থাকে।”

সচিব আরও উল্লেখ করেন, অতীতে কখনও লটারির মাধ্যমে প্রশাসনিক পদায়নের নজির নেই। তাই এ বিষয়ে যেসব গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তা ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, “প্রশাসনিক কাঠামো অত্যন্ত সুসংহতভাবে পরিচালিত হয়। মাঠ প্রশাসনের মতো সংবেদনশীল দায়িত্বে কর্মকর্তাদের নিয়োগ সবসময় যাচাই-বাছাই করে করা হয়। কাজেই লটারির মতো কোনো প্রক্রিয়া এখানে আসতে পারে না।”

তিনি সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করেন যে, নির্বাচনকালীন সময়ে জেলা প্রশাসকদের পদায়ন নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সম্পন্ন হবে। দেশের সুশাসন, প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা এবং নির্বাচনী দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনের স্বার্থে প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে সম্পন্ন করা হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

বৈঠক শেষে সচিব আরও বলেন, “আমরা চাই না মাঠ প্রশাসনে কোনো ধরনের অস্থিরতা তৈরি হোক। জেলা প্রশাসকদের দায়িত্ব অনেক বড়। তারা শুধু নির্বাচন নয়, সাধারণ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নসহ নানাবিধ কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাই তাদের নিয়োগ ও পদায়ন সবসময় সতর্কতার সঙ্গে করা হয়।”

প্রশাসনভিত্তিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে ডিসি নিয়োগ নিয়ে গুঞ্জন ছড়ানো অযৌক্তিক। কারণ অতীতে যেমন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কর্মকর্তাদের পদায়ন হয়েছে, এবারও তেমনটাই হবে। তারা বলছেন, ফিট লিস্ট প্রণয়ন থেকে শুরু করে কমিটির সুপারিশ ও অনুমোদনের ধাপগুলো ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই।

সচিবের এই বক্তব্যের পর নির্বাচনপূর্ব সময়ে মাঠ প্রশাসনের নিয়োগ-সংক্রান্ত জল্পনা অনেকটাই প্রশমিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রশাসনের অভ্যন্তরে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত যে নিয়োগ প্রক্রিয়া, সেটিই অব্যাহত থাকবে বলে তার বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে।

তিনি আবারও জোর দিয়ে বলেন, “ডিসি নিয়োগের বিষয়ে কোনো লটারির প্রশ্নই আসে না। এটি হবে যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও কমিটির সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে। এবং শেষ পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের মাধ্যমে।”

নির্বাচনের সময় মাঠ প্রশাসনের ওপর দায়িত্ব বেড়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, নির্বাচনী সরঞ্জাম বিতরণ, ভোটকেন্দ্র পরিচালনা এবং ফলাফল সংগ্রহে জেলা প্রশাসকরা কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেন। ফলে তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে গুজব বা ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। তবে সচিবের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে যে, প্রশাসনিক ধারাবাহিকতা ও প্রতিষ্ঠিত নিয়মের বাইরে কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে না।

সবশেষে সচিব বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এককভাবে কোনো পদক্ষেপ নেয় না। এটি একটি সমন্বিত কার্যক্রম। তাই জনগণকে আশ্বস্ত করছি—যেকোনো নিয়োগ বা পদায়ন হবে যথাযথ নিয়ম ও বিধান মেনে। 

repoter