ঢাকা,  শুক্রবার
১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ , ০২:০৮ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ: ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল * গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, দেশে–বিদেশে উদ্বেগ * ঢাকা–দিল্লি সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা, আজ চালু থাকছে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র * ৬৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ জব্দ, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে গতি আনছে সরকার * যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ ফিরিয়ে আনছেন ট্রাম্প, সমালোচনার কেন্দ্রে ভেনেজুয়েলা অভিযান * পাবনার বেড়ায় স্পিডবোটে এসে বাজারে ডাকাতি, ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত * যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভেনেজুয়েলা অভিযান: মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে * ট্রাম্পের ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা: ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে নতুন জটিলতা * গুম ও মানবতাবিরোধী অভিযোগে ১৩ সেনা কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে * বিএনপির ৪০টির বেশি আসনে মনোনয়নসংক্রান্ত অসন্তোষ, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ব্যস্ত সমাধান খুঁজতে

কর কেলেঙ্কারির দায়ে ব্রিটেনের উপপ্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ

repoter

প্রকাশিত: ০৬:৩৮:৫৬অপরাহ্ন , ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আপডেট: ০৬:৩৮:৫৬অপরাহ্ন , ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

-সংগৃহীত ছবি

ছবি: -সংগৃহীত ছবি

ব্রিটেনের রাজনীতিতে বড় ধাক্কা খেলেন উপপ্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রেইনার। কর ফাঁকির অভিযোগে তীব্র সমালোচনার মুখে শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের পর লেবার সরকারের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে তার নাম উচ্চারিত হচ্ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক কর কেলেঙ্কারির ঘটনায় রাজনৈতিক চাপ বাড়তে থাকায় শেষ পর্যন্ত তাকে পদ ছাড়তে হলো।

ঘটনার সূত্রপাত হয় গত মে মাসে, যখন রেইনার ইংল্যান্ডের হোভ এলাকায় প্রায় আট লাখ পাউন্ড মূল্যের একটি ফ্ল্যাট কেনেন। অভিযোগ ওঠে, ওই ফ্ল্যাটকে তিনি নিজের প্রধান বাসভবন হিসেবে দাখিল করেছিলেন, যদিও প্রকৃত প্রধান বাসভবন ছিল অ্যাশটন-আন্ডার-লাইনে। এই অপ্রকাশিত বৈপরীত্যের ফলে তিনি প্রায় ৪০ হাজার পাউন্ড কর এড়িয়ে যান। কর আইন অনুযায়ী দ্বিতীয় বাসভবনের ক্ষেত্রে বেশি হারে কর দিতে হয়, কিন্তু প্রধান বাসভবন হিসেবে দেখানোর কারণে তিনি সেই কর এড়িয়ে যেতে সক্ষম হন।

মিডিয়ার অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সারা দেশে তীব্র আলোচনা শুরু হয় এবং লেবার সরকারের ভাবমূর্তি নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। ৪৫ বছর বয়সী এই রাজনীতিক প্রথমে অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরে চাপের মুখে নিজের ভুল স্বীকার করেন। তিনি জানান, ভুল আইনি পরামর্শের ভিত্তিতেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আইনজীবীর পরামর্শে ফ্ল্যাটটিকে প্রধান বাসভবন হিসেবে দেখানো হয়েছিল, যদিও বাস্তবে তা ছিল না।

রেইনার আরও ব্যাখ্যা করেন, ব্যক্তিগত জীবনের নানা জটিলতা তার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছিল। ২০২৩ সালে বিবাহবিচ্ছেদ এবং তার ছেলের আজীবন শারীরিক প্রতিবন্ধকতার মতো পরিস্থিতি তাকে ভুল পথে পরিচালিত করে। তবে তিনি স্বীকার করেন, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, তিনি যে কর ফাঁকি দিয়েছেন তা অস্বীকার করার উপায় নেই।

এই কেলেঙ্কারি রেইনারের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে বড় আঘাত হেনেছে। বিশেষ করে কারণ, অতীতে তিনি বহুবার কনজারভেটিভ নেতাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। এবার একই ধরনের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে ওঠায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা সুযোগ হাতছাড়া করেনি। কনজারভেটিভ পার্টির নেতা কেমি বেডেনোক ও শ্যাডো চ্যান্সেলর মেল স্ট্রাইড প্রকাশ্যে তার পদত্যাগ দাবি করেন।

ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যমগুলোও এই ঘটনায় ব্যাপক কভারেজ দেয়। জনমত দ্রুত রেইনারের বিপক্ষে যেতে শুরু করে। ফলে তিনি আর রাজনৈতিক অবস্থান রক্ষা করতে পারেননি। বুধবার নিজের ভুল স্বীকার করার পরও সমালোচনার ঝড় থামেনি। শেষ পর্যন্ত দল ও সরকারের ওপর চাপ বাড়তে থাকায় তিনি উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান।

অ্যাঞ্জেলা রেইনারের জীবনের গল্প অনেকটা নাটকীয়। মাত্র ১৬ বছর বয়সে মা হওয়ার পর তিনি নানা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ করেন। লেবার পার্টিতে দ্রুত উত্থান ঘটিয়ে স্বল্প সময়ে তিনি ব্রিটিশ রাজনীতির অন্যতম প্রভাবশালী নারী হয়ে ওঠেন। তার সরব উপস্থিতি, স্পষ্টভাষী চরিত্র ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ তাকে বিশেষ জনপ্রিয় করে তোলে। প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের পরেই অনেকেই তাকে লেবার পার্টির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব হিসেবে ভাবছিলেন।

কিন্তু কর ফাঁকির এই ঘটনা তার সেই উজ্জ্বল পথচলাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ধাক্কা। যদিও পদত্যাগের মাধ্যমে তিনি আপাতত চাপ সামলাতে পেরেছেন, তবে ভবিষ্যতে লেবার পার্টিতে তার অবস্থান কতটা অটুট থাকবে, তা এখন সময়ই বলে দেবে।

ব্রিটেনের রাজনীতিতে কর ফাঁকি বা অনিয়মের ঘটনা নতুন নয়। অতীতে এমন ঘটনায় একাধিক রাজনীতিবিদের পদত্যাগ ঘটেছে। তবে রেইনারের ঘটনা বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে, কারণ তিনি শুধু সরকারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে ছিলেন না, বরং লেবারের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়েও আলোচনায় ছিলেন। এ কারণেই তার পদত্যাগকে অনেকেই লেবার সরকারের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখছেন।

রেইনার পদত্যাগের পর লেবার পার্টির ভেতরে নেতৃত্বের ভারসাম্য নতুন করে সাজানোর প্রয়োজন হবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। পাশাপাশি বিরোধী দল কনজারভেটিভরা এই ঘটনাকে আসন্ন রাজনৈতিক লড়াইয়ে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

অ্যাঞ্জেলা রেইনারের জন্য এটি নিঃসন্দেহে এক বড় ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক সংকট। তবে তিনি যদি ভবিষ্যতে আবার জনআস্থা অর্জন করতে চান, তাহলে তাকে এখনই নতুন করে ভাবতে হবে এবং রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের পুনর্গঠন শুরু করতে হবে। তার পদত্যাগ কেবল একটি কেলেঙ্কারির সমাপ্তি নয়, বরং ব্রিটিশ রাজনীতিতে সততা ও স্বচ্ছতার প্রশ্নকে আরও জোরালোভাবে সামনে নিয়ে এসেছে।

repoter