ঢাকা,  শুক্রবার
১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ , ০২:১০ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ: ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল * গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, দেশে–বিদেশে উদ্বেগ * ঢাকা–দিল্লি সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা, আজ চালু থাকছে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র * ৬৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ জব্দ, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে গতি আনছে সরকার * যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ ফিরিয়ে আনছেন ট্রাম্প, সমালোচনার কেন্দ্রে ভেনেজুয়েলা অভিযান * পাবনার বেড়ায় স্পিডবোটে এসে বাজারে ডাকাতি, ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত * যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভেনেজুয়েলা অভিযান: মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে * ট্রাম্পের ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা: ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে নতুন জটিলতা * গুম ও মানবতাবিরোধী অভিযোগে ১৩ সেনা কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে * বিএনপির ৪০টির বেশি আসনে মনোনয়নসংক্রান্ত অসন্তোষ, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ব্যস্ত সমাধান খুঁজতে

খামেনিকে হত্যার হুমকিতে রাশিয়ার বিস্ফোরক হুঁশিয়ারি: ‘প্যান্ডোরার বাক্স খুলে যাবে’

repoter

প্রকাশিত: ০৬:৫২:২০অপরাহ্ন , ২০ জুন ২০২৫

আপডেট: ০৬:৫২:২০অপরাহ্ন , ২০ জুন ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: ছবি: সংগৃহীত

ক্রেমলিন জানাল—আয়াতুল্লাহ খামেনিকে হত্যার চেষ্টা হলে তা মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্ব রাজনীতিকে টালমাটাল করে তুলবে; মার্কিন নীতির কড়া সমালোচনা মস্কোর

বিশ্ব কূটনীতিতে নতুন করে উত্তেজনার বাতাস বইতে শুরু করেছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির বিরুদ্ধে সম্ভাব্য হুমকি নিয়ে মুখ খুলেছে রাশিয়া। কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়ে ক্রেমলিন বলেছে, যদি খামেনিকে হত্যা করা হয়, তবে রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া হবে ‘অত্যন্ত নেতিবাচক’। এই ধরনের একটি ঘটনা শুধু ইরান নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্য ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে গভীর সংকটে ঠেলে দেবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন রাশিয়ার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ।

সেন্ট পিটার্সবার্গের ঐতিহাসিক কনস্টানটাইন প্রাসাদে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেওয়া এক এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে এই বিস্ফোরক মন্তব্য করেন পেসকভ। তাঁর মতে, খামেনির হত্যাচেষ্টা হবে এমন এক ধ্বংসাত্মক পদক্ষেপ যা এই অঞ্চলে ‘প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দেবে’।

তিনি বলেন, "এটি শুধু ইরান বা মধ্যপ্রাচ্যকে নয়, পুরো বিশ্বকে অস্থির করে তুলবে। এ ধরনের হুমকির প্রতিক্রিয়া শুধু কূটনৈতিক পরিসরে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এর অভিঘাত রাজনৈতিক, সামরিক এবং আদর্শিক অঙ্গনেও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে।"

বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়া তার পুরোনো মিত্র ইরানের সঙ্গে সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় উন্নীত করেছে। সম্প্রতি দুই দেশ একটি কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, যা ইঙ্গিত দেয়—যেকোনো বৈশ্বিক সংঘাতে এখন তেহরান-মস্কো জোট আরও দৃঢ়। এরই প্রেক্ষাপটে খামেনিকে নিয়ে রাশিয়ার এই সরব অবস্থান কেবল বন্ধুত্বের ইঙ্গিত নয়, বরং ভূরাজনীতিতে রাশিয়ার প্রত্যক্ষ আগ্রহের প্রকাশ বলেও মনে করা হচ্ছে।

সাক্ষাৎকারে পেসকভ আরও বলেন, “ইরানে সরকার পরিবর্তন বা নেতা হত্যার চিন্তা অবাস্তব, অবৈধ এবং অকল্পনীয়। বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত এ ধরনের অমানবিক ধারণাকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করা।” তিনি কোনো দেশের নাম না বললেও স্পষ্টভাবে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ইঙ্গিত করেন এবং বলেন, “এটি এমন এক বিষয়ে কথা বলা, যা করা উচিত নয়। এমন চিন্তাও অগ্রহণযোগ্য।”

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি এক মন্তব্যে বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েল সামরিক পদক্ষেপ নিলে যুক্তরাষ্ট্র এতে যোগ দেবে কিনা, সে সিদ্ধান্ত নেবেন আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে। ট্রাম্পের এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। পেসকভ এর জবাবে বলেন, "এই পরিস্থিতিতে নতুন কোনো পক্ষের যোগদান পরিস্থিতিকে শুধু আরও ঘোলাটে করবে, এতে সংঘাত শুধু বিস্তৃতই হবে না, বরং তা অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।"

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, "এই মুহূর্তে যেকোনো ধরণের সামরিক তৎপরতা, বিশেষ করে তৃতীয় পক্ষের সরাসরি অংশগ্রহণ, মধ্যপ্রাচ্যের ভঙ্গুর পরিস্থিতিকে বিস্ফোরণের মুখে ঠেলে দিতে পারে।"

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার বর্তমান উত্তেজনা দীর্ঘ দিনের। তবে সম্প্রতি এটি আরও প্রকট হয়েছে সিরিয়ায় ইরানঘনিষ্ঠ অবস্থানে ইসরায়েলি হামলা এবং পাল্টা প্রতিক্রিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে। এই সংঘাতের প্রেক্ষিতে ইরানের শীর্ষ নেতৃত্ব যদি কোনোভাবে হুমকির মুখে পড়ে, তাহলে তা যে বৈশ্বিক নিরাপত্তা কাঠামোকে বিপর্যস্ত করতে পারে, সে ইঙ্গিতই দিয়েছে রাশিয়া।

পেসকভ ইঙ্গিত দেন যে, যদি খামেনিকে হত্যার মতো ঘটনা ঘটে, তাহলে তার প্রতিক্রিয়া শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নয়, বরং ইরানের অভ্যন্তরেও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। “ইরানের মাটি থেকেই এমন প্রতিক্রিয়া আসবে, যা সকল হিসাব-নিকাশ উল্টে দিতে পারে। এতে চরমপন্থা, প্রতিশোধস্পৃহা এবং ধ্বংসের যে তরঙ্গ সৃষ্টি হবে, তা ঠেকানো সহজ হবে না,”— বলেন তিনি।

বিশ্লেষকদের মতে, খামেনির মৃত্যু বা হত্যার ঘটনা শুধুমাত্র একজন ধর্মীয় নেতার প্রাণহানি নয়, বরং তা হবে ইরানি রাষ্ট্র কাঠামোর কেন্দ্রে এক ধাক্কা। এই নেতৃত্বশূন্যতা সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে পারে অনেক চরমপন্থী গোষ্ঠী এবং পশ্চিমা বৈরী শক্তিগুলো। এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের পরিপ্রেক্ষিতে এটিকে আরেকটি 'আরব বসন্ত'-এর মতো রাজনৈতিক পুনর্জাগরণ কিংবা বিশৃঙ্খলার সূত্রপাত হিসেবেও দেখা যেতে পারে।

রাশিয়া বরাবরই ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যে তার অন্যতম কৌশলগত মিত্র হিসেবে বিবেচনা করে। সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের সরকারকে সমর্থন দিতে গিয়ে এই দুই দেশের যৌথ পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশেষ নজর কেড়েছে। সুতরাং খামেনির বিরুদ্ধে যেকোনো হুমকি শুধু ইরান নয়, রাশিয়ার জন্যও উদ্বেগের কারণ।

ক্রেমলিন মুখপাত্রের মতে, পশ্চিমা দেশগুলোর বর্তমান ভূরাজনৈতিক অগ্রাধিকার ইঙ্গিত দেয় তারা ইরানের নেতৃত্বকে দুর্বল করতে চায়। কিন্তু এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন বিশ্বব্যাপী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে।

তিনি বলেন, “পশ্চিমের এই আগ্রাসী ভূরাজনৈতিক মানসিকতা থেকে এখনই সরে আসতে হবে। নইলে পৃথিবী এক নতুন, অনিয়ন্ত্রিত যুদ্ধাবস্থার দিকে এগিয়ে যাবে।"

বিশ্ব পরিস্থিতি এখন এমন এক সংবেদনশীল অবস্থানে পৌঁছেছে, যেখানে একটি হঠকারী সিদ্ধান্ত গোটা মানবজাতির জন্য দীর্ঘস্থায়ী বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। খামেনির বিরুদ্ধে হুমকি কিংবা সম্ভাব্য হত্যার পরিকল্পনা শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির জীবন নিয়ে সংশ্লিষ্ট নয়, বরং তা একটি জাতির অস্তিত্ব, একটি ভূখণ্ডের শান্তি এবং একটি আদর্শগত সত্তার ওপর আঘাত বলে বিবেচিত হবে।

এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব শুধু নীরব দর্শক হয়ে থাকা নয়, বরং সক্রিয়ভাবে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খোঁজা। বিশেষ করে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আঞ্চলিক শক্তিগুলোর উচিত নতুন করে সংলাপ শুরু করা এবং সংঘাত নয়, সহাবস্থানের নীতি গ্রহণ করা।

রাশিয়ার মুখপাত্রের বক্তব্যে যে কঠিন সত্য উঠে এসেছে—তা বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোর সামনে এক কঠিন প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়: আমরা কি সত্যিই একটি সহিংস ও অস্থিতিশীল বিশ্ব চাই, নাকি এখনই সময় সামরিক আগ্রাসন নয়, কূটনৈতিক বুদ্ধিমত্তার পথে হাঁটার?

খামেনির মতো নেতার নিরাপত্তা শুধু ইরানের জন্য নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার প্রতীক। তাই তাকে ঘিরে যেকোনো হুমকি মোকাবেলায় বিশ্ব সমাজের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক রাজনীতির এই সংবেদনশীল পর্যায়ে উদ্ভট শত্রুতা ও আধিপত্যবাদী নীতি নয়, বরং মানবতা ও শান্তির বার্তা দিয়েই সামনে এগোনোই বর্তমান সময়ের দাবি।

repoter