
ছবি: -সংগৃহীত ছবি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন কারচুপিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল। বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে মওলানা ভাসানী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী শেখ সাদী হাসান। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী তানজিলা হোসেন বৈশাখীসহ ছাত্রদল মনোনীত অন্যান্য প্রার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে বৈশাখী অভিযোগ করেন, ভোটের দিনে বিভিন্ন হলে তাদের প্রার্থীদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, তাজউদ্দীন হলে তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি এবং ভোটার তালিকায় ভোটারদের ছবিও সংযুক্ত করা হয়নি। এর ফলে সঠিকভাবে ভোটার শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তিনি আরও বলেন, ২১ নং হলে ইচ্ছাকৃতভাবে মব সৃষ্টি করে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়। অপরদিকে জাহানারা ইমাম হলে এক স্বতন্ত্র প্রার্থীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনাও ঘটে।
বৈশাখী অভিযোগ করেন, পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াই নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। তিনি দাবি করেন, জামায়াতপন্থী নেতার সরবরাহকৃত ওএমআর মেশিন ব্যবহার করা হয়েছে, যা ছাত্রদল মেনে নেয়নি। একই প্রতিষ্ঠানের সরবরাহকৃত ব্যালট ব্যবহার করেই ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এতে ভোটের স্বচ্ছতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠে এসেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, ১০ থেকে ২০ শতাংশ ব্যালট আগে থেকেই শিবিরপন্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়নি তো? মেয়েদের হলে একাধিকবার একই ব্যক্তিকে ভোট দিতে দেখা গেছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। এ ছাড়া শিবিরপন্থী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগও তোলেন বৈশাখী।
ছাত্রদলের প্রার্থীরা অভিযোগ করেন, শুরু থেকেই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অসংখ্য অনিয়ম হয়েছে, যা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করেছে। ভোটে শিক্ষার্থীদের মতামতের সঠিক প্রতিফলন ঘটছে না বলেও তারা দাবি করেন। তাদের মতে, এ নির্বাচন ছাত্রসমাজের প্রত্যাশার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বরং এটি একটি কারচুপি ও প্রহসনের নির্বাচনে পরিণত হয়েছে।
শেখ সাদী হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নিরপেক্ষ তদারকি না থাকায় শিবিরপন্থীরা সুবিধা পাচ্ছে এবং ছাত্রদলের প্রার্থীদের বারবার বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে চাইলেও তাদের সে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।
ছাত্রদলের মনোনীত প্যানেল মনে করে, নির্বাচন প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই একটি পরিকল্পিত কারচুপির পথ তৈরি করা হয়েছে। তারা অভিযোগ করে বলেন, ভোটের পরিবেশ নষ্ট করতে একদল সুসংগঠিতভাবে কাজ করছে, যার কারণে প্রকৃত শিক্ষার্থীদের রায় প্রতিফলিত হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে তারা বাধ্য হয়েই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত অন্য প্রার্থীরাও একই সুরে অভিযোগ তোলেন। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, এ নির্বাচন ইতিমধ্যেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে এতে অংশ নেওয়া অর্থহীন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের স্বার্থে এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষার্থে তারা নির্বাচন বর্জন করছেন।
ছাত্রদল মনোনীত প্রার্থীরা সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা অভিযোগ করেন, প্রশাসন যদি চাইত তবে ন্যূনতমভাবে হলেও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা যেত। কিন্তু বিভিন্ন অনিয়মের কারণে শিক্ষার্থীদের আস্থা পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে।
তাদের মতে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার যে সুযোগ এসেছিল, তা অনিয়ম ও কারচুপির কারণে ভেস্তে গেছে। তারা বলেন, এ নির্বাচন শিক্ষার্থীদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটায়নি বরং এটি একটি পরিকল্পিত নাটকীয়তায় পরিণত হয়েছে।
অবশেষে ছাত্রদল মনোনীত প্রার্থীরা জানান, শিক্ষার্থীদের প্রকৃত রায় নিশ্চিত করার মতো পরিবেশ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত তারা কোনো প্রহসনের নির্বাচনে অংশ নেবেন না। এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সকলের কাছে আহ্বান জানান, ভবিষ্যতে যাতে প্রকৃত গণতান্ত্রিক চর্চার সুযোগ সৃষ্টি হয় সে জন্য সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা রাখবেন।
repoter