ছবি: ছবি: সংগৃহীত
সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার, যিনি স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যার মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন, ৩ বছর ৭ মাস পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। আজ, বুধবার বিকেল ৫টা ৩৫ মিনিটে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। বাবুল আক্তারের বর্তমান স্ত্রী ইশরাত জাহান মুক্তা ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনরা তাকে কারাগারের গেটে স্বাগত জানান।
আইনগত প্রক্রিয়া শেষে মুক্তি
বাবুল আক্তারের জামিনের পর, তার সাবেক শ্বশুর মোশাররফ হোসেন আদালতে জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু উচ্চ আদালত তার আবেদন গ্রহণ না করায়, বাবুলের মুক্তিতে কোনো বাধা আর থাকেনি। গতকাল, ৩ ডিসেম্বর হাইকোর্টের দেওয়া ৬ মাসের অন্তর্বর্তী জামিন স্থগিত করার আবেদনে সাড়া না দেওয়ায়, বাবুল আক্তারকে আজ বিকেলে মুক্তি দেওয়া হয়।
বাবুল আক্তারের আইনজীবী কফিল উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানান, "বিকেল ৫টা ৩৫ মিনিটে বাবুল আক্তার একটি সাদা গাড়িতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।"
মিতু হত্যাকাণ্ডের পর শুরু হওয়া তদন্ত
২০১৬ সালের ৫ জুন, বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু গুলিতে নিহত হন। তিনি তার ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দেওয়ার সময় নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এই হত্যাকাণ্ডের পর বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিলেন।
তদন্ত শেষে, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ২০২১ সালের ১২ মে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়, এবং এর পরপরই, মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাবুল আক্তারসহ ৮ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পরেই বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পিবিআই তদন্তের মাধ্যমে বাবুল আক্তারকে ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি শ্বশুরের মামলায় অব্যাহতি দেয়। তবে, তার দায়ের করা মামলায় ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পিবিআই আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। এই অভিযোগপত্র গ্রহণ করে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১০ অক্টোবর মামলা গ্রহণ করেন।
বাবুলের জামিন ও আপিল আদালতের সিদ্ধান্ত
বাবুল আক্তারের জামিনের বিষয়ে ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর হাইকোর্টের দেওয়া ৬ মাসের অন্তর্বর্তী জামিন স্থগিত চেয়ে মোশাররফ হোসেন আবেদন করেন। তবে, গতকাল আদালত তার আবেদন না মঞ্জুর করে। এর ফলে, বাবুল আক্তারের জামিন বহাল থাকে এবং কারাগারে কোনো বাধা না থাকায় তিনি মুক্তি পান।
আইনজীবী কফিল উদ্দিন বলেন, "এখন আর কোনো বাধা নেই, বাবুল আক্তার জামিনে মুক্ত হয়ে ঘরে ফিরছেন।"
বাবুল আক্তারের মুক্তি ও তার পরিবারের প্রতিক্রিয়া
বাবুল আক্তারের মুক্তি পাওয়া নিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তার বর্তমান স্ত্রী ইশরাত জাহান মুক্তা, যারা কারাগারের বাইরে বাবুলের মুক্তির অপেক্ষায় ছিলেন, তিনি জানালেন যে এই দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে বাবুলের মুক্তি তার পরিবারকে স্বস্তি এনে দিয়েছে।
এদিকে, মাহমুদা আক্তারের হত্যাকাণ্ডের পর বাবুল আক্তারের সঙ্গে সম্পর্কের বিভিন্ন প্রশ্ন উঠলেও, এখনো তার বিরুদ্ধে আদালত থেকে বিচার প্রক্রিয়া চলছে।
মুক্তির পর ভবিষ্যৎ আইনি লড়াই
বাবুল আক্তারের জামিনে মুক্তি পেলেও, তার বিরুদ্ধে মিতু হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়া এখনও চলমান রয়েছে। তাকে এবং তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণও চলছে। মামলাটি সম্পন্ন হওয়ার পর আদালতের রায় আসবে, যা বাবুল আক্তারের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।
বাবুল আক্তারের মুক্তি শুধু তার পরিবারে নয়, এই মামলার সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য পক্ষেও বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। আইনি লড়াইয়ে তার মুক্তি এবং পরবর্তী পরিস্থিতি কি হবে, সেটি সবার নজরে রয়েছে।
repoter