ছবি: -সংগৃহীত ছবি
রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার কিছু পর এ উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনাস্থলে আসা কয়েক দফা মিছিল এবং পূর্ববর্তী রাজনৈতিক সংঘর্ষের ধারাবাহিকতায় এ সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
সন্ধ্যার কিছু আগে বিজয়নগর থেকে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা এবং পল্টন এলাকা থেকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কর্মীরা মিছিল নিয়ে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে আসেন। তখন দুই পক্ষের উপস্থিতি ঘিরে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। প্রায় ১৫ মিনিটের মতো টান টান পরিস্থিতির পর গণঅধিকার পরিষদের শীর্ষ নেতারা তাদের কর্মীদের সরিয়ে নেন। তবে এর কিছুক্ষণ পরেই অজ্ঞাত কয়েকজন ব্যক্তি পেছন দিক থেকে এসে জাপা কার্যালয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে।
হঠাৎ শুরু হওয়া এই নিক্ষেপণের পর কার্যালয়ের সামনে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। কিছুক্ষণ পর উত্তেজিত ব্যক্তিরা ভেতরে প্রবেশ করে আগুন ধরিয়ে দেন। অফিস কক্ষের চেয়ার-টেবিল বাইরে এনে তাতেও আগুন জ্বালানো হয়। অগ্নিকাণ্ডে ভবনের ভেতর ও বাইরের অংশে কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ শুরু করে। পরে জলকামান ব্যবহার করে ছত্রভঙ্গের চেষ্টা চালানো হয়। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় পানি ছিটিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু হয়। সন্ধ্যা ছয়টা চল্লিশ পর্যন্ত ঘটনাস্থলে আতঙ্ক বিরাজ করে এবং এলাকায় প্রচণ্ড বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
এর আগে শনিবার বিকেলে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিজয়নগরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করা হয়। সমাবেশ শেষে দলটির নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি পল্টন, প্রেসক্লাব, মৎস্যভবন হয়ে কাকরাইল ও নাইটিঙ্গেল মোড় অতিক্রম করে আবার বিজয়নগরের দিকে ফেরে। মিছিল চলাকালে উত্তেজনা বাড়লেও বিকেলের শেষ দিকে কিছুটা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু সন্ধ্যার পর ঘটনাপ্রবাহ নতুন করে সহিংসতার রূপ নেয়।
ঘটনার পটভূমি হিসেবে শুক্রবার রাতের সংঘর্ষের কথা উঠে এসেছে। বিজয়নগরে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই সংঘর্ষে গণঅধিকার পরিষদের অন্তত ৫০ জন আহত হন, যাদের মধ্যে ছিলেন দলের সভাপতি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।
নুরুল হক নুর গুরুতর আহত হওয়ায় প্রথমে তাকে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে রাত ১১টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। আহতদের অনেককেই বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার সকালে গণঅধিকার পরিষদ বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করে, যা থেকে বিকেলের মিছিল ও পরবর্তী উত্তেজনার সূত্রপাত ঘটে।
এদিকে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। ভাঙচুর ও দাহ্য পদার্থ ছোড়ার কারণে আশপাশের এলাকায়ও ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। দোকানপাট দ্রুত বন্ধ হয়ে যায় এবং সড়কজুড়ে যান চলাচলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছে। হামলাকারীদের সনাক্ত করতে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ধারাবাহিক রাজনৈতিক সহিংসতা এবং দলগুলোর পারস্পরিক বিরোধ উত্তেজনা বাড়াচ্ছে। শুক্রবারের সংঘর্ষের পরও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় শনিবারের ঘটনায় নতুন করে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে।
কাকরাইল এলাকায় এখনও বাড়তি পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। স্থানীয় জনগণ বলছেন, এ ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ও নিরাপত্তা বারবার বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
ঘটনার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। জাতীয় পার্টির নেতারা হামলার নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি করেছেন। অপরদিকে গণঅধিকার পরিষদ জানিয়েছে, তারা হামলা বা অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িত নয়। বরং পরিকল্পিতভাবে তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে সহিংসতায় রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
রাজধানীর ব্যস্ত এলাকায় এমন হামলা ও অগ্নিসংযোগ নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। সাধারণ মানুষ আশা করছে, রাজনৈতিক দলগুলো সংযমী হবে এবং আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধান করবে, যাতে সহিংসতার পুনরাবৃত্তি এড়ানো যায়।
repoter




