ছবি: ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে মঙ্গলবার বিকেলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পাঠ করেন ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’। এই ঐতিহাসিক দলিলের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পথে যাত্রার দিকনির্দেশনা দেন। একই সঙ্গে ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া সকল সংগ্রামীকে ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণা করেন তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০২৪ সালের জুলাই মাস একটি স্মরণীয় ও গৌরবময় অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এই মাসেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সূত্র ধরে দেশের জনগণ ফ্যাসিবাদবিরোধী অসহযোগ আন্দোলনে সামিল হয় এবং সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ নতুন দিনের স্বপ্ন নিয়ে রাজপথে নেমে আসে। এরই ধারাবাহিকতায় ৫ আগস্ট ‘ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ’-এর মাধ্যমে একটি চূড়ান্ত গণআন্দোলন সংঘটিত হয়, যার প্রেক্ষাপটে তৎকালীন স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগে বাধ্য হন।
ঘোষণাপত্রে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য দীর্ঘদিন ধরে জনগণের ওপর দমন-পীড়ন, নিপীড়ন, গুম-খুন ও বাকস্বাধীনতা হরণের নীতিতে পরিচালিত হয়েছে। সরকারের ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে দেশের তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে ছাত্রসমাজ, প্রতিবাদে মুখর হয় এবং তাদের নেতৃত্বে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপক গণআন্দোলন। এই আন্দোলনের তীব্রতা ও সর্বজনীনতায় বাধ্য হয়ে সরকার পতনের পথে গড়ায়।
তিনি বলেন, দেশের ভবিষ্যৎ রক্ষা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এই আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে পারে না। সেজন্যই দেশের জনগণের পক্ষ থেকে এই শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হলো। একইসঙ্গে তাঁদের পরিবার, আহত যোদ্ধা এবং আন্দোলনে অংশ নেওয়া সকল ছাত্র ও জনতার জন্য পূর্ণ আইনি সুরক্ষা এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করা হবে বলে ঘোষণাপত্রে জানানো হয়।
ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়, এই আন্দোলন শুধু কোনো সরকার পতনের সংগ্রাম নয়, এটি একটি আদর্শিক লড়াই ছিল। যেখানে জনগণ বৈষম্য, অন্যায়, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি নতুন রাষ্ট্র কাঠামোর জন্য লড়াই করেছে। এই লড়াইয়ের চূড়ান্ত বিজয় ঘটে ৫ আগস্ট, যেদিন গণভবনের দিকে জনতার ঢল দেখে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন।
এই প্রেক্ষাপটে ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের জনগণ এই আন্দোলনকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এই অভ্যুত্থানের সব শহীদকে জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা করার মাধ্যমে একটি নতুন যুগের সূচনা ঘটলো, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে। এটি শুধুমাত্র একটি দলিল নয়, এটি একটি ঐতিহাসিক অঙ্গীকার, যার মাধ্যমে আমরা একটি নতুন, গণতান্ত্রিক, অংশগ্রহণমূলক এবং বৈষম্যহীন বাংলাদেশ নির্মাণের যাত্রা শুরু করলাম।
এই অনুষ্ঠানে দেশজুড়ে চলমান উত্তাল আন্দোলনের প্রতিধ্বনি প্রতিফলিত হয় উপস্থিত জনতার চোখেমুখে। সকলের মাঝে ছিল এক আত্মবিশ্বাস, যে বাংলাদেশ আর কখনও স্বৈরতন্ত্র, নিপীড়ন ও অন্যায়ের কাছে মাথানত করবে না। ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ সেই জাতীয় প্রতিজ্ঞার সিলমোহর হয়ে উঠেছে, যা ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
repoter




